icon/64x64/nature জীববৈচিত্র্য

ফিরে আসতে শুরু করেছে মাছের রাজা ইলিশ

অধিক শিকার, দূষণ আর নদীতে জলের অভাবে যখন পুরো এশিয়া জুড়ে ইলিশ মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, সেখানে বাংলাদেশ এখন ইলিশ সংরক্ষনে সৃষ্টি করেছে ব্যতিক্রম এক দৃষ্টান্ত।
<p>Hilsa fish at a market in Barisal, Bangladesh [image by Finn Thilsted]</p>

Hilsa fish at a market in Barisal, Bangladesh [image by Finn Thilsted]

এবছর এপ্রিলে বাংলা নববর্ষ (১৪২৩) পালনের সময় বাংলাদেশ যেন একটু বেশিই উদ্বেলিত! অনেক বছর পর মাছ বাজারে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকার অনেক মাছ বাজারে বাঙালীর মাছের রাজা ইলিশ অবশ্য বেশ দামেই বিক্রি হচ্ছে  – এমনকি মাছের আকার খুব একটা বড়ও নয়, তারপরেও সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বাঙালীর মনে আনন্দ এনে দিয়েছে তা হচ্ছে  অনেক দিন পর বাজারে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এ মুহুর্তে মাছটির চাহিদা এতো বেশি যে রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরী করা হয়েছে। ফেসবুকের এই গ্রুপটি মনে করছে ইলিশের অতিরিক্ত চাহিদার কারনে প্রচুর পরিমানে জাটকা (খোকা ইলিশ) নিধন শুরু হয়েছে যার কারনে এই মাছটি অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে সাধারন মানুষ মাথা না ঘামালেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ অনুকরনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি  এবছর বাংলা নববর্ষ পালন করতে গিয়ে ইলিশ মাছ খাবেন না বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা দিয়েছেন। তার এই ঘোষনার ফলে সারা দেশে নববর্ষ পালনকে কেন্দ্র করে ইলিশ খাওয়ার প্রবনতা কিছুটা হলেও কমেছে।

নদীতে মাছের পরিমান বৃদ্ধির অন্যতম কারন হচ্ছে মূলত গত শরৎকাল ও তার আগের শরৎকালে ইলিশ ধরার উপরে সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এই সময় ইলিশ মাছ নদী থেকে সাগরে ফিরে যায়। শুরুর দিকে মৎসজীবি বা জেলেরা এই নিষেধাজ্ঞা মানতে না চাইলেও এখন তারা নদীতে প্রচুর মাছ পেয়ে খুশী।

বাংলাদেশ ও ভারতের বাঙালীদের মধ্যে এই মাছটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। শুধু তাই নয়, ইলিশ বাঙালীর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইলিশ মাছের এই প্রজাতিটি এশিয়ার প্রায় ১২টি দেশে পাওয়া যায়। দেশগুলোর মধ্যে পশ্চিম দিকে রয়েছে কুয়েত, বাহরাইন  এবং পূর্বদিকে পাকিস্তান ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও চীন।

গত কয়েক বছরে কেবল বাংলাদেশেই ইলিশ মাছের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য প্রায় সব দেশেই এই মাছের আধিক্য কমেছে। ইলিশ মাছ মূলত সাগর ও মোহনায় বাস করে। কেবল প্রজননের সময় এরা সাগর থেকে নদীর উজানে চলে আসে। তবে এখন এই মাছটি হারিয়ে যেতে বসেছে যার একমাত্র কারন অধিক পরিমানে এই মাছটি ধরা হয়ে যাচ্ছে। একইসাথে মাছটির আকৃতি ও স্বাদের ক্ষেত্রেও এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

কেমন ধরা পড়ছে?

বাংলাদেশ মৎস বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন গঙ্গা ও ব্রক্ষ্মপুত্রের মিলনে সৃষ্ট বিশাল এই জলরাশী মেঘনা নদীতে এবছর গত বছরের তুলনায় ৫০% বেশি মাছ ধরা পড়েছে। তারা মনে করছেন এটি সম্ভব হয়েছে কেবল সরকার পরিচালিত মৎস সংরক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনার কারনেই।

বাংলাদেশ মৎস গবেষনা সংস্থা’র (বিএফআরআই) পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, এ বছর আমাদের দেশে বিগত বছরগুলোর তুলনায় ধৃত ইলিশের পরিমান ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাধারনত বসন্তকালে নদীতে ইলিশ মাছ ধরা হয়ে থাকলেও এই মাছটি ধরার অন্যতম মৌসুম হচ্ছে ভরা বর্ষা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর)। ইলিশের অন্যতম প্রধান বিচরণ এলকা চাঁদপুর ও ভোলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদী। বিগত মৌসুমে নদীর এই অংশে ১০০ মিটার দীর্ঘ ও চার মিটার চওড়া এ্কটি জাল দিয়ে প্রতি ঘন্টায় তিন থেকে আট কেজি  ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। অথচ এ বছর শীতকালেও একই ধরনের জাল ব্যবহার করে একই সময়ে ৫ থেকে ১৪ কেজি পর্যন্ত মাছ ধরতে পেরেছেন জেলেরা। আনিসুর রহমান বলেন, আমি এবছর একজন জেলেকে এক ঘন্টায় ২০ কেজি ইলিশ ধরতে দেখেছি।

তবে মাছের আকৃতি কিন্তু খুব একটা বড় হচ্ছে না। এখন যেসব মাছ ধরা পড়ছে তার মধ্যে একটি পরিণত ইলিশ মাছের ওজন ৩৫০ থেকে ৮০০ গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর চেয়ে ছোট আকৃতি ও ওজনের মাছই ধরা পড়ছে। তারপরেও এখানকার মৎস কর্মকর্তারা আনন্দিত।

নিষেধাজ্ঞা

নদীতে ইলিশ মাছের আধিক্যের অন্যতম কারন হচ্ছে এই মাছটির প্রজননের সময় অর্থাৎ বর্ষায় ভরা মৌসুমে (অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) ইলিশ ধারার উপরে সরকারী নিষেধাজ্ঞা। এ ব্যাপারে আনিসুর রহমান দ্যথার্ডপোল.নেটকে বলেন, আমাদের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও এর বাস্তাবায়ন প্রথম দিকে ছিল খুব কঠিন একটি কাজ। তবে এখন এটাই প্রমানিত যে এর ফলে নদীতে প্রচুর মাছ বেড়েছে। ২০১৪ সালে সরকার প্রথম দেশের সব নদী, মোহনা ও সাগরে ১১ দিনের জন্য মাছ ধরার উপওে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তীতে এই নিষেধাজ্ঞা ২০১৫ সালে ১৫ দিন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ সরকার ইলিশ সংরক্ষনের বিষয়টি ২০০২ সালের আগে তেমনভাবে ভাবেনি। সেসময় ইলিশ উৎপাদনের বার্ষিক পরিমান ছিল ১৯৯,০০০ টন। অথচ ১৯৯০ সালে এই পরিমান দশ লক্ষ টনেরও বেশি ছিল। বিষয়টি নিয়ে মিডিয়া সেচ্চার হওয়ার আগ পর্যন্ত ইলিশ মাছটিকে কেবল একটি পুষ্টি উপাদান হিসেবেই দেখা হতো। বাংলাদেশের সামগ্রিক মৎস পুষ্টির মাত্র ১০ শতাংশ চাহিদা পূরন করতো ইলিশ ছিল ।

বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রক্ষার ব্যাপারে একটি সংরক্ষণ কর্র্মসূচি গ্রহন করে। আনিসুর রহমান এই লক্ষ্যে একটি গবেষনা পরিচালনা কারেন যা সরকার পরবর্তীতে আমলে নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো জাটকা (খোকা ইলিশ) ধরার ব্যাপারে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে বলা হয়েছিল নয় ইঞ্চির ছোট ইলিশ মাছ নভেম্বর মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ধরা যাবে না। সেসময় সরকার বলেছিল তিন বছর অর্থাৎ ২০০৭ পর্যন্ত তারা জেলেদের মধ্যে এনিয়ে  সচেতনতা তৈরীর কাজ করে যাবে। এসময় পর্যন্ত নির্দিষ্ট মৌসুমে মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

প্রথমম দিকে মেঘনা নদীর ৪টি স্থানে সরকার বিশেষভাবে নজর দিতে শুরু করে কারন এই স্থানগুলোকে মাছের বেড়ে ওঠার জন্য ‘নার্সারী গ্রাউন্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ স্থানগুলো হচ্ছে  – চাঁদপুরের সাতনল থেকে লক্ষীপুরের চর আলেক্সান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকা, ভোলার মদনপুর/চর ইলিশা  থেকে চর পিয়াল এবং মেঘনার শাহবাজপুর মোহনা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকা, ভোলার ভেদুরিয়ার তেতুলিয়া নদী থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকা এবং শরিয়তপুর জেলার নরিয়া ও ভেদরগঞ্জে পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা।

এছাড়াও সরকার আরো একটি নদী এলাকাকে এই মাছটির অভয়ারন্য হিসেবে ঘোষনা করে। সেটি হচ্ছে পটুয়খালীর কলাপাড়ার ৪০ কিলোমিটার নদী এলাকা। এটি মেঘনার অন্য একটি শাখা নদী যার নাম আন্ধারমানিক। এই নদীটির উল্লেখিত এলাকার ৪০ কিলোমিটার এলাকায় নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরার উপরে নিষেধজ্ঞা আরোপ করা হয়।

একই সাথে সরকার দেশব্যাপী কারেন্ট জালসহ সব ধরনের ক্ষতিকর জাল (৩৮-৫১ মিমি) নিষিদ্ধ করে কারন এসব জালে জাটকাসহ সব ধরনের ছোট মাছ আটকা পড়ে। এছাড়াও এমন মাছ ধরা পড়ে যার আসলে কোনো ক্রেতা পাওয়া যায় না। ১৯৯০ সাল থেকে এই জালটি জেলেদেও মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যা প্রথম দিকে থাইল্যান্ড থেকে আমদানী করা হতো। পরবর্তীতে ঢাকার আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে এই জাল তৈরীর অসংখ্য কারখানা তৈরি হয়।

নিষেধাজ্ঞার কারনে জেলেদের ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা কওে সরকার। সেসময় দেশের প্রায় পাঁচ লাখ জেলেকে নিবন্ধিত করা হয় এবং মাসে তাদের ৪০ কেজি করে চাল দিতে শূরু করে সরকার। সমস্যা হচ্ছে এটি একটি বিদেশী সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প ছিল যা ২০১৫ সালে শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ২২৪,০০০ জেলেকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। সরকার এখন প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায় পুরোপুরি চালুর ব্যাপারে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।

তবে জেলেরা এই প্রনোদনা বা সহায়তাকে পর্যাপ্ত মনে করছেন না। বাংলাদেশ জাতীয় মৎসজীবি সমিতির মহাসচিব ফণীভূষণ মালো দ্যথার্ডপোল.নেটকে বলেন, একটি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট জেলে পরিবারে দৈনিক তিন কেজি চাল প্রয়োজন। তাই একমাসে ওই পরিবারে সব মিলিয়ে প্রয়োজন ৯০ – ১০০ কেজি চাল। পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য চাহিদা মেটানোর জন্য কমপক্ষে প্রয়োজন এক হাজার টাকা (১২ মার্কিন ডলার) অর্থ সাহায্য।

যারা আসলে এই ধরনের সহায়তা বা ক্ষতিপূরন পাচ্ছেন না তারা এক প্রকার বাধ্য হয়েই মাছ ধরতে নদীতে যাচ্ছেন। মালো বলেন, জেলেরা এই নিষেধাজ্ঞা মানবে না যদি না তাদের ক্ষতিপূরন পর্যাপ্ত হয় এবং সবাইকে এই প্রকল্পের আওতায় না আনা হয়।

ফলাফল

এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার কারনে নদী ও সাগরে ইলিশ মাছের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ মৎস বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ি ২০০২ সালের তুলনায় ২০০৭-০৮ সালে ইলিশ মাছের পরিমান বেড়েছে। ২০০৭-০৮ সালে বার্ষিক উৎপাদন পরিমান ছিল ২৯০,০০০ টন। ২০১৩-১৪ সালে এই পরিমান গিয়ে পৌছায় বার্ষিক ৩৮৫,০০০ টনে, যা আসলে দেশের বার্ষিক মৎস উৎপাদনের ১১ শতাংশ।

কিন্তু এর আগে অতিরিক্ত মৎস নিধনের ফলে ইলিশ মাছের সামগ্রীক অভিবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। পদ্মা নদীতে বিশেষ করে গঙ্গা নদী ভারত থেকে বাংলাদেশের ঠিক যেই অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে সেই অঞ্চলে এই মাছের বিচরণ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। অতীতের মতো মাছটি উজানে আর অভিবাসন অর্থাৎ নদীর উপরের দিকে চলাচল বন্ধ করে দেয়। মাত্র পাঁচ দশক আগেও গঙ্গা-পদ্মা-ব্রক্ষ্মপুত্র-মেঘনা অববহিকার প্রায় ৫০টি নদীতে এই মাছ পাওয়া যেত। অথচ এই শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে এই সংখ্যা কমে ১০টি নদীতে এসে পৌছায়।

গবেষকরা বলছেন, ব্যাপক নিধনের পাশাপাশি নদীতে বর্ষার পরে জলের প্রবাহ কম থাকাও অন্যতম বড় একটি কারন এই মাছটি হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে। যার ফলে দিন দিন নদীতে এই মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকার পূর্ব নির্ধারিত ৪টি জোন থেকে বেরিয়ে ২০১৪ সাল থেকে সারা দেশের সব নদী, মোহনা ও সাগরে শরৎকালে ১১ দিনের জন্য সব ধরনের মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তীতে ২০১৫ সাল থেকে এই নিষেধাজ্ঞার পরিমান ১৫ দিন করা হয়।

বাংলাদেশ মৎস বিভাগের উপ-পরিচালন মাসুদ আরা মমি বলেন, সরকারের এই কর্মসূচির ফলাফল আজ খুব পরিস্কার। এবার কেবল আমাদেও ইলিশ-প্রেমীরাই খুশী নয়, ইলিশ মাছ এখন পাওয়া যাচ্ছে পদ্মা নদীতেও, সীমান্ত দিয়ে মাছ এখন আরো উচানে অর্থাৎ ভারতেও চলে যাচ্ছে।

রুপোলী মাছ

রঙের কারনে এই মাছটিকে রুপোলী মাছ বলা হয়। মৎস বিভাগের তথ্য মতে ২০১৩-১৪ সালে সারা পৃথিবীতে যে পরিমান ইলিশ ধরা হয়েছে তার ৬০ শতাংশই ধরা পড়েছে বাংলাদেশে। তাই গবেষকরা মনে করছেন এই রুপোলী মাছ রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশীক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে হোসাইন জিল্লুর রহমানের প্রকাশিত এক গবেষনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০১১-১২ সালে ৬,১৭৩ টন ইলিশ রপ্তানী করে ২.৯৪ বিলিয়ন টাকা (৩৭.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) আয় করেছে। ২০১২-১৩ সালে এই মুদ্রা আয়ের পরিমান ছিল ১৬০ বিলিয়ন টাকা (২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

তবে ইলিশের দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষনের লক্ষ্যে এখনও অনেক কাজ বাকি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নিয়ামুল নাসের ইলিশ নিয়ে গবেষনা করছেন অনেক দিন ধরে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) পরিচালিত ‘ইকোসিস্টেম ফর লাইফ’ প্রকল্পের আওতায় তিনি ইলিশ সংক্রান্ত একটি গবেষনা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। ‘মাইগ্রেশন, স্পনিং প্যাটার্নস অ্যান্ড কনজারভেশন অব হিলশা শ্যাড ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ শীর্ষক ওই গবেষনার একজন গবেষক। তাঁর মতে, এক মৌসুমে ইলিশ বেশি পাওয়ার অর্থ এই নয় যে বছরের পর বছর ধরে এই চিত্র অব্যাহত থাকবে।

দ্যথার্ডপোল.নেটকে তিনি বলেন, আমাদের ভাবতে হবে যে আমরা এখন যত পারি ইলিশ ধরব নাকি এখনই ইলিশ ধরার বিষয়টি নিয়ন্ত্রন করবো। তিনি বলেন,  লক্ষীপুজো (মধ্য অক্টোবর থেকে শেষ পর্যন্ত) ও স্বরস্বতী পুজোয় ( ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত) কখনই ইলিশ মাছ খাওয়া হতো না। লক্ষীপুজোর সময় দেবীকে একজোড়া ইলিশ মাছ উপহার দেয়ার মধ্য দিয়ে বছরের শেষ ইলিশ মাছ খাওয়া হতো। মাছ ধরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে যে সময়ে জাটকাগুলো নদী থেকে সাগরে ফিরে যায়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে মাছগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। তখন হিন্দু ও মুসলিম উভয়েই এই সংষ্কৃতিকে মেনে চলতেন।

প্রয়োজন আন্ত:সীমান্ত সহযোগিতা

আইইউসিএনের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদ বলেন, বঙ্গোপসাগর ও যেসব নদী এই সাগরে পতিত হয়েছে সেখানে ইলিশ মাছ সংরক্ষন করতে হলে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারকে যৌথভবে কাজ করতে হবে। শাহাদ আইইউসিএন পরিচালিত ইকোসিস্টেম ফর লাইফ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

তিনি বলেন, যদিও মিয়ানমারে ইলিশ মাছটি জনপ্রিয় নয়, তারা কিন্তু বেশ ভালো পরিমানে তাদের ইরাবতী নদীতে এই মাছটি পাচ্ছে। যেহেতু তারা এই মাছটা খায় না তাই তারা এটি বিদেশে রপ্তানী করছে। বাংলাদেশ ও ভারত যদি ইলিশ সংরক্ষনে কাজ করতে চায় তাহলে এ দু’টি দেশকে অবশ্যই মিয়ানমারের সাথে মিলে কাজ করতে হবে।

একটি মন্তব্য যোগ করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.