দূষন

দূষণে বিপন্ন গঙ্গা

পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গা আজ দূষনে বিষাক্ত - দূষণের এই বর্জ্যরে প্রায় অর্ধেকই আসছে নদীর পাড়ের শহরের বসতবাড়ি আর কারখানা থেকে
বাংলা
<p>Ganga river, West Bengal. Image source: Katjusa Cisar, CC BY 2.0</p>

Ganga river, West Bengal. Image source: Katjusa Cisar, CC BY 2.0

পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার একটি প্রধান শাখা নদী হুগলী। নদীর তীরে অবস্থান এক সময়কার ফরাসী উপনিবেশ চন্দননগরের। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্টটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ওয়ান্ডার ল্যান্ড পার্ক নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র যেখানে প্রতিদিন প্রচুর মানুষের সমাগম হয় বেড়ানো বা বনভোজনের উদ্দেশ্যে। প্লান্টের বড় বড় পাইপ আর হিন্দু দেবতাদের ভাষ্কর্যের মাঝে সারি সারি সবুজ গাছের ছায়ায় পার্কটি স্থানীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

তবে নির্মল এই পরিবেশের মধ্যে এই প্লান্টটি স্থাপনের বাস্তবতার কিছুটা অসামঞ্জস্য রয়েছে। সরকার প্ল্যান্টটি গড়ে তুলেছিল গঙ্গার জল দূষনমুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে। অথচ এর দ্বারা এখন শহরের মাত্র ১০ শতাংশ বর্জ্য পরিশোধন করা হচ্ছে। শহরের বেশিরভাগ বাড়িই এই পরিশোধন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত নয়। তাই খুব সহজেই শহরের অপরিশোধিত নোংরা বর্জ্য সরাসরি পবিত্র গঙ্গায় গিয়ে মিশছে।

কোলকাতার একেবারে উত্তরে গঙ্গার আজ এমনই বেহাল দশা! অথচ বারানসি বা কানপুরের ঘাটগুলোর মতো এখানে তেমন একটা নজর দেয়া হচ্ছে না।

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের চেয়ারম্যান কল্যান রুদ্র বলেন, রাজ্যের কয়েকশত শহর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭ বিলিয়নেরও বেশি অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি চলে যাচ্ছে গঙ্গায়। কল্যান রুদ্র দীর্ঘদিন গঙ্গা নদীর বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষনা করছেন।

সবমিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে ৪৮ শতাংশ অপরিশোধিত জল গঙ্গা অববাহিকায় প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে। এর মাত্র ৪২ শতাংশ জল পরিশোধন করতে পারছে রাজ যার অর্থ হচ্ছে রাজ্যের ৫৪টি নালা দিয়ে প্রতিনিয়ত ১,৭৭৯ এমএলডি (মিলিয়ন লিটার/দিন) গঙ্গায় গিয়ে পড়ছে।

তবে বাস্তবে এই অবস্থা আরো ভয়াবহ: হিমালয় থেকে উৎসারিত হয়ে প্রায় ২৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবশে করে বিশ্বের সবচেয়ে জনকীর্ন অববাহিকার এই নদী। চলার পথে প্রায় অর্ধ বিলিয়ন মানুষের বর্জ্য নিজ বক্ষে ধারণ করে গঙ্গা। ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (সিপিসিবি) মতে, এই বিপুল পরিমান বর্জ্যরে মাত্র ১০ শতাংশ পরিশোধন করা সম্ভব হয়।

নদীর জল দূষনের পিছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হচ্ছে মানুষের অপরিশোধিত বর্জ্য। সম্প্রতি গঙ্গায় এক মিডিয়া শিক্ষা সফরের সময় এই মন্তব্য করেন কল্যান রুদ্র। দ্যথার্ডপোল.নেটকে তিনি বলেন, নদীর প্রায় ৮৫ শতাংশ দূষনের কারণ হচ্ছে এই মনুষ্য সৃষ্ট বর্জ্য। দূষণ সৃষ্টিকারী বাকি বর্জ্যরে যোগান আসে কারখানার শিল্প বর্জ্য, কৃষিতে ব্যবহৃত সার, অন্যান্য কঠিন বর্জ্য, মানব শরীর এবং মৃত পশুপাখির দেহ থেকে।

সবচেয়ে আশংকার বিষয় হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গায় প্রতি ১০০ এমএল জলে ব্যাকটেরিয়ার (গাদ কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া) পরিমান ১৬০,০০০, অর্থাৎ নদীতে মানুষের মলের উপস্থিতির মাত্রা অত্যন্ত উচ্চ (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার সর্বোচ্চ নিরাপদ মাত্রা প্রতি ১০০ এমএল জলে ১০০০)। এর প্রভাব অত্যন্ত সূদরপ্রসারী। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত সিপিসিবি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো গঙ্গা জুড়েই এই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে। এমনকি রিশিকেশ ও হরিদ্বারের মতো হিন্দু তীর্থস্থানগুলোতেও এই ধরনের জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। অথচ ধরে নেয়া হয় এসব জায়গায় গঙ্গার জল অন্যান্য স্থানের চেয়েও বিশুদ্ধ।

কল্যান রুদ্রের মতে, প্রয়োজনীয় স্যুয়েজ প্ল্যান্ট করতে হলে এ মুহুর্তে প্রয়োজন অতিরিক্ত ১৩,৪৬৭ কোটি রুপি (২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। অতীতে গঙ্গার ধারে যে কোনো ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট স্থাপনে আর্থিক সহায়তা আসতো কেন্দ্রীয় সরকারের কছ থেকে। এখন ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা (গঙ্গা শুদ্ধি সংক্রান্ত জাতীয় মিশন) চালুর পরে অর্থের যোগানের দায়িত্ব বর্তেছে রাজ্য সরকারের উপরে।

এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৯৫টি দূষণসৃষ্টিকারী কারখানা বন্ধ করেছে। অন্যদিকে উত্তর প্রদেশেও আরো ৯৪টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। এসবের পরেও খুব একটা পরিবর্তন কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। কোলকাতা থেকে ভাগিরথি-হুগলির উজানে গেলে দেখা যাবে সেখানে নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কলা বাগান, ইটের ভাটা আর কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প। এসব প্রকল্প থেকে প্রচুর বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদীর দু’পাড় থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে অবৈধ বালু ব্যবসায়িরা। আর অন্যদিকে কর্মকর্তারা ব্যস্ত অবৈধ এই বালু উত্তোলনকারীদের অপরাধ নিরুপনে – এরা কতটুকু দোষী কিংবা এই অপরাধের বিরুদ্ধে কে বা কারা ব্যবস্থা গ্রহন করবে – সেই নিয়েই তারা তর্কে ব্যস্ত থাকেন।

অতীতের যতো ভুল

ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ এবং পবিত্র নদী গঙ্গার জল পরিস্কারের কাজটি শুরু থেকেই ব্যর্থতায় ঘেরা। শুরুতে তিন দশকের সরকারী নানা ধরনের পরিকল্পনা আর কোটি কোটি ডলার ব্যয়ের পরেও পবিত্র এই নদীটি দিনকে দিন আরো দূষিত হয়েছে।

গঙ্গার জল শুদ্ধ করার প্রথম কাজ শুরু হয় ১৯৮৬ সালে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান এর সূচনা করেন যার উদ্দেশ্য ছিল নদীকে দূষন মুক্ত করা। শুরুতে পরিকল্পনা অনুযায়ি নদীতে যেসব নালা দূষিত জল বয়ে নিয়ে আসতো সেই নালাগুলোর মুখ ঘুরিয়ে দিয়ে নদী তীরবর্তী বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্রে প্রবাহিত করে তারপর তা পরিস্কার করে আবারো নদীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। প্রথম পর্যায়ে মূল নদীতে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপে তা বর্ধিত করে দিল্লির মধ্য দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত যমুনানহ গঙ্গার অন্যান্য শাখা নদীগুলোতে এই প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। ২০০৯ সালে সমগ্র গঙ্গায় তা সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা নেয় সরকার।

২০১৪ সালে দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ২০২০ সালের মধ্যে গঙ্গাকে দূষন মূক্ত করার ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। তবে গবেষনা বলছে, গঙ্গা দিনকে দিন আরো দূষিত হয়ে পড়ছে।

ত্রুটিপূর্ণ পদক্ষেপ

কল্যান রুদ্র মনে করেন, শিল্পায়ন ও বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র (এসটিপি) উপরে নজর দেয়ার কাজটি ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে। কেবল এসব প্লান্টই নদীর সাথে সংযুক্ত নয়। তিনি বলেন, বর্তমান জাতীয় পরিকল্পনা অনুযায়ি শতভাগ প্রচেষ্টা কাভারেজ নিশ্চিত করেও গঙ্গার জলকে দূষনমুক্ত করা সম্ভব নয়। কারন এ মুহুর্তে যেসব এসটিপি রয়েছে তার কোনোটিতেই আধুনীক প্রযুক্তি নেই যার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া (গাদ কলিফর্ম) সম্পুর্নভাবে ধ্বংস করা সম্ভব। ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত পদ্ধতিতে কেবল কৃষি ও শিল্প কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব। তবে এসব পরিশোধন কেন্দ্র জলে থাকা অন্যান্য জৈবিক বর্জ্য পরিশোধনে সক্ষম নয়।

পর্যাপ্ত প্রবাহের অভাব

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই নদীতে এখন জলের প্রবাহ অত্যন্ত ক্ষীণ। কল্যান রুদ্র বলেন, গঙ্গা কানপুরে পৌছার আগেই ৯০ শতাংশেরও বেশি জল কৃষি জমিতে সেচের জন্য অপসারন করে নেয়া হয়। ফলে যে সমস্যাটি হয় তা হচ্ছে আরো নি¤œাঞ্চলে দূষণ বা অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ অপসারন করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবেশকর্মীরা অনেকেই মনে করেন গঙ্গার স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে কাজ করা উচিত। তবে নদীর উজানে জলবিদ্যুত প্রকল্পের জন্য বাঁধ নির্মান  করে এই স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করা হচ্ছে।

এই বছর পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গায় জলের প্রবাহ এতো কমে গিয়েছিল যে ফরাক্কা কয়লা বিদ্যুত ষ্টেশন বন্ধ করতে হযেছিল। সেসময় বেশ কয়েকটি কয়লাবাহী জাহাজ নব্যতার অভাবে আটকে গিয়েছিল। অন্যদিকে সমগ্র অববাহিকায় কৃষি জমিতে ব্যাপক ভিত্তিক সেচের ফলে দিনের পর দিন নদীতে জলের স্তর নেমে যাচ্ছে। আরো দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে উত্তরাখন্ডে নদীর উৎসমুখে গঙ্গোত্রী হিমবাহটি প্রতিবছর ২০ মিটার করে সরে যাচ্ছে – এর ফলে নদীতে জলের প্রবাহ কমে আসছে।

গঙ্গা কর্মকৌশলে নদীটির জলের প্রবাহ বৃদ্ধির বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে তবে কিভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন পরিবেশবিদরা।

স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি       

নদী অববাহিকায় বসবাসকারী মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি অত্যন্ত নাজুক কারন প্রচুর মানুষ এই নদীর জলের উপরে নির্ভরশীল। যদিও প্রচলিত আছে রয়েছে যে গঙ্গার নিজস্ব একটি বিশুদ্ধীকরণ প্রক্রিয়া রয়েছে, তারপরেও দূষিত জলের মাধ্যমে মারাত্বক রোগের জীবাণু ছড়িয়ে হাজার হাজর প্রানহানীর ঘটনা ঘটছে। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে প্রতি বছর পাঁচ বছরের নিচে কয়েক লাখ শিশু কেবল ডায়রিয়ার  মতো রোগে মারা যায়। এছাড়া জলবাহিত অন্যান্য রোগেও এখানে হাজার হাজার মানুষ ভূগে থাকে।

দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে গঙ্গার ধারে বসবাসকারী মানুষের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ভারতের জাতীয় ক্যান্সার নিবন্ধন কর্মসূচীর (এনসিআরপি) তথ্য অনুযায়ি উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের প্লাবন ভূমি এবং বিহারে নদী অববাহিকার আশেপাশে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে পরিপাকতন্ত্র, কিডনি, লিভার, মুত্রনালী ও চর্ম ক্যান্সারের প্রবনতা বেশি। দিল্লিতে নারীদের মধ্যে পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারের প্রবনতা সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

এছাড়াও আরো বেশ কিছু ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এখানকার অধিবাসীরা। নর্দমা-নি:সৃত বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য থেকে এক ধরনের জিন ছড়ায় যার নাম এনডিএন  – ১। এই বিশেষ জিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি বেশিরভাগ এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। দিল্লির যমুনা ও গঙ্গার উজানে যেখানে সাধারনত ধর্মীয় তীর্থস্থানগুলো রয়েছে, সেখানে এনডিএন  – ১ এর অস্তিত্ব অনেক বেশি পরিমানে পাওয়া গেছে। এ সম্পর্কে অল্প কিছু গবেষনা রয়েছে স্থানীয় সুশিল সমাজ পর্যায়ে। তবে এর বাইরে এ নিয়ে তেমন কোনো গবেষনা নেই।

ঔপনিবেশিক ধারণা

কল্যান রুদ্র মনে করেন গঙ্গার অনেক সমস্যার মূল কারন ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারনা। উনিশ শতকের মাঝামাঝি যখন এখানে বৃটিশ শাসন ছিল,  ভারত মাইলের পর মাইল খাল খনন করে তখন কৃষি জমিতে সেচের ব্যবস্থা করে। এর ফলে দেশের কৃষি ব্যবস্থা ধীরে ধীরে সেচের জন্য নদীর উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তৎকালীন শাসকরা সবসময়ই গঙ্গাকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে। তারা এমন একটি নদীকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করেছে যেটি হাজার মাইল পরিভ্রমন করেছে এঁকে বেঁকে এবং পলি বহন করে এনে তার অববাহিকাকে পরিনত করেছে এক উর্বর ভূমি হিসেবে। তারা বন্যাকে একটি সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে নদীর তীর ধরে বাঁধের জাল তৈরি করেছিল। প্রথম দিকে এর ফলে অনেক মানুষই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে এই বাঁধ দেয়ার ফলে নদীর তলদেশ পূর্ন হয়ে যাচ্ছে পলি জমার কারনে যা আসলে তীরবর্তী মানুষের জীবনকে আরো বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আসলে প্রথমদিকে মানুষ এটা বুঝতে পারেনি যে ছোটখাটো বন্যা আসলে স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া এবং এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর মাধ্যমে নদীতে দূষন সৃষ্টিকারী বর্জ্য ভেসে চলে যায়। স্বাধীনতার পরে পশ্চিমাদের কাছ থেকে ধার করা নদী ব্যবস্থাপনা আরো জোরদার হয়। কিন্তু গঙ্গা একটি অন্যরকম নদী, এর গতি প্রবাহ অত্যন্ত জটিল।

এখন অবাধ্য এই নদীর তীরে জনবসতি বেড়েছে ক্রমাগত। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে কল-কারখানা, বড় বড় রেল আর সড়ক নেটওয়ার্ক।

এর থেকে পরিত্রানের একটাই উপায়,  তা হচ্ছে গঙ্গাকে আবারো ¯্রােতস্বীনি করে গড়ে তুলতে হবে। কল্যান রুদ্র মনে করেন, এই নদীটিকে এখন স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে বইতে দিতে হবে। নদীর দু’পাশে প্লাবনভূমিকে মুক্ত রাখতে হবে যাতে সেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা গড়ে তোলা না হয়। এর ফলে নদীর পাশে জলাভূমিগুলো প্রাকৃতিকভাবে দূষণ নিষ্কাশন করতে পারবে এবং বন্যা ও পলি পরিবহনের জন্য নদী তার প্রয়োজনীয় জায়গা পাবে।

অনুবাদ – তানজিলা রওশন