জলবায়ু

জলবায়ু সংবেদনশীল উন্নয়নের পথে হাটতে চায় বাংলাদেশ

এই শতকের মাঝামাঝি নিম্ন আয়ের অর্থনীতি থেকে উচ্চ আয়ের অর্থনীতিতে উত্তরণে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি নিজেদের হালনাগাদ এনডিসিতে (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন বা জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) ব্রিজ ফুয়েল হিসেবে গ্যাসকে মাথায় রেখেই আগাতে চাইছে
বাংলা
<p>বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় একটি বায়ু বিদ্যুত প্রকল্পের পাশে খেলায় মত্ত শিশুরা (ছবি: এলামি) </p>

বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় একটি বায়ু বিদ্যুত প্রকল্পের পাশে খেলায় মত্ত শিশুরা (ছবি: এলামি)

আর কিছু দিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন, আর জলবায়ু নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রনেতাদের সবচেয়ে বড় এই আসরের প্রাক্কালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি গ্রহনযোগ্য সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়ার” ক্ষেত্রে তার প্রতিশ্রুতির বিষয়টি পূণর্ব্যক্ত করেন। দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত নিজের এক নিবন্ধে তিনি বলেন, এটি কেবল একারনেই নয় যে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রভাবগুলো এড়াতে চাই”। অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখলেও বিষয়টি যৌক্তিক”।

ভৌগোলিক অবস্থান ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ। এরই মধ্যে দেশটি তার জলবায়ু সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রীন হাউজ গ্যাস (জিএইচজি) নির্গমন মাত্রা কমিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে।  তবে এই দশকের শেষ নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখায় দেশটি তার ঈপ্সিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে  – এক দিকে রয়েছে কার্বন সমৃদ্ধ জ্বালানী ব্যবহার করে উন্নয়নের চাহিদা আর অন্যদিকে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের পথ থেকে উত্তরনে নিজেদের নীতিগত অবস্থান। 

কী আছে এই জলবায়ু প্রতিশ্রুতিতে? 

চলতি বছর আগষ্ট মাসে বাংলাদেশ তার এনডিসি (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন বা জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) হালনাগাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। হালনাগাদ এনডিসিতে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ২০১২ সালের তুলনায় তাপ ধরে রাখে এমন সব ধরনের নির্গমন মাত্রা কমপক্ষে ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।  জ্বালানী, ভূমির ব্যবহার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বহুমাত্রিক প্রশমন পদক্ষেপ গ্রহনের মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে বিদ্যুত সেক্টরসহ সব ধরনের খাতে নানা ধরনের প্রশমন কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে, যেমন  – এনার্জি খাতে (বিদ্যুৎ,জ্বালানী ইত্যাদি) নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার বৃদ্ধি করা, যা এই মুহুর্তে বলা যায় নগন্য; কয়লার ব্যবহার হ্রাস; এবং প্রিপেইড মিটার চালু করা। এছাড়াও এতে যানজট হ্রাস, যন্ত্রচালিত যানবাহনের ব্যবহার কমিয়ে অযান্ত্রিক যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান, সড়ক থেকে রেলপথে উত্তরণসহ আরো বেশ কিছু বিষয় এই প্রতিশ্রুতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি কৌশল হলো প্রাকৃতিক গ্যাসে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যা দূষণ সৃষ্টিকারী জ্বালানী ব্যবহার বৃদ্ধির মতো একটি বিতর্কিত কৌশল হিসেবে বিবেচিত। 

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের পরিচালক মির্জা শওকত আলী কিছুটা ব্যাখ্যা করে বলেন, ২০১২ সালের ব্যবসা বাণিজ্য এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে মানদণ্ড বিবেচনা করে আমরা হিসেব করে দেখেছি যে (কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই) আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে প্রায় ৪১০ মিলিয়ন টন জিএইচজি উৎপন্ন করবে।  

মির্জা শওকত আরো বলেন, এই অনুমিত পরিমানের মধ্যে, ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমন মাত্রা ৬.৭৩ শতাংশ অর্থাৎ ২৭.৫৬ মিলিয়ন টন হ্রাস করার প্রস্তাব করেছি। এছাড়াও আমরা অর্থনৈতিক ও কারিগরী সহায়তা প্রাপ্তির সাপেক্ষে নির্গমন মাত্রা আরো ৬১.৯ মিলিয়ন টন অর্থাৎ ১৫.২১ শতাংশ হ্রাসের প্রস্তাব করেছি। তিনি বলেন, বৈশ্বিক নির্গমন বাজেটে বাংলাদেশের অবদান শতকরা ০.৫ ভাগেরও কম। একটি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকুই করার প্রস্তাব দিয়েছি।

জীবাশ্ম জ্বালানী কেন্দ্রিক উন্নয়ন

বাংলাদেশের এনডিসি অনুযায়ী, দেশের মোট কার্বন নির্গমনের প্রায় শতকরা ৫৫ শতাংশই আসে জ্বালানী খাত থেকে। এর পরেই রয়েছে কৃষি, বন এবং ভূমি ব্যবহার, বর্জ্য এবং শিল্প প্রক্রিয়াকরণ খাতগুলো। এদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে শুধুমাত্র জ্বালানী খাত থেকেই কার্বন নির্গমনের হার ৭৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে জাতিসংঘ। 

২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশে মাথাপিছু আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বছরে ৬৯০ মার্কিন ডলার, অথচ সেসময় দেশের মাত্র ৪৫ শতাংশ অঞ্চল বিদ্যুতের আওতায় ছিল।  দেশের ইতিহাসে ঠিক সেই সময়ই কয়লা, তেল ও গ্যাস খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানীর বিষয়টি আলোচনার মূল কেন্দ্রে উঠে আসে।

সরকারের এই কৌশলের ফলে অবশ্য ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ একটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয় এবং দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালে ১৫ শতাংশ হ্রাস পায় যা কিনা ১৯৯১ সালে ছিল ৪৪ শতাংশ। এই হিসাব দারিদ্র সীমা নির্ধারনের একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। এই মানদণ্ড অনুযায়ি দারিদ্র সীমার ভিত্তি হচ্ছে দৈনিক ১.৯০ মার্কিন ডলার। বিদ্যুৎ উৎপাদন জোরেসোরে বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ২০১৯ সালে ৭ শতাংশেরও উপরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়। পাশাপশি জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২১ সময়সীমার মধ্যে দেশটির জিডিপি ৫.৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এই প্রবৃদ্ধি এমন একটি সময় বাংলাদেশে সংঘটিত হয যখন কোভিড -১৯ মাহামারীতে বিশ্বের অনেক দেশই অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ততার মুখে পড়ে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপপিছু আয়ের পরিমান গিয়ে দাঁড়ায় ২,২২৭ মার্কিন ডলারে। ২০৪১ সালে অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যে পরিকল্পনা প্রনয়ন করেছে তাতে বলা হয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ চরম দারিদ্র নির্মূল করতে সক্ষম হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উচ্চ-আয়ের দেশে উন্নীত হতে সক্ষম হবে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ গিগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০গিগাওয়াট নির্ধারণ করেছে, যার মধ্যে থেকে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ আসবে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। 

বাংলাদেশের এনডিসিতে ব্রীজ ফুয়েল (প্রাকৃতিক গ্যাস) নির্ভরতার লক্ষ্যমাত্রা 

যদিও বাংলাদেশ প্রধান উন্নয়ন সূচকগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমান সাফল্য অর্জন করেছে, যেমন – জ্বালানীর যোগান বৃদ্ধি, জনসংখ্যার প্রায় শতভাগকে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সংযুক্তি। এটি ২০০০ সাল থেকে প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের অর্থনীতি মূলত জীবাশ্ম জ্বালানীর উপরেই নির্ভরশীল – বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর। আন্তর্জাতিক জ্বালানী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের জ্বালানী সরবরাহের প্রায় ৬০ শতাংশই আসে গ্যাস থেকে। বাকিটা পূরণ করে তেল, জৈব জ্বালানী, বর্জ্য এবং কয়লা। 

তেল ও কয়লার চেয়ে স্বল্প দূষণকারী জ্বালানী হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে ব্রীজ ফুয়েল। এটি এক ধরনের পদ্ধতি যা প্রয়োগের মাধ্যমে একটি দেশে নির্গমন মাত্রা কমিয়ে আনার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। এনডিসি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ি বাংলাদেশ এরই মধ্যে কয়লা ও তেল ব্যবহারের পরিমান কমিয়ে এনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়িয়ে ধীরে ধীরে নির্গমন মাত্রা হ্রাস করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বিদ্যুত, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, যেহেতু জ্বালানী খাতই পরিবেশ দূষণের জন্য সবচেয়ে বড় কারন, তাই আমাদের সরকার এই সেক্টরে নির্গমন মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের এই মন্ত্রণালয়টি দেশের জ্বালানী ও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ  ও বাস্তবায়নে কাজ করে  থাকে। মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা এরই মধ্যে ১০টি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করেছি যেগুলো চালু থাকলে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ আমরা কমপক্ষে ৮৪ গিগাওয়াট কার্বন সমৃদ্ধ বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারতাম।

তবে সমালোচকরা বলছেন প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধির প্রচেষ্টা প্যারিস চুক্তির উদ্ধেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্ত:সরকার প্যানেল সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, বৈশ্বিক উঞ্চায়ন মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বজায় রাখতে হলে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী গ্যাসের ব্যবহার ৫৫% হ্রাস করতে হবে।  

বিদ্যুৎ ও জ্বালানী অবকাঠামো কার্বনমুক্তকরণ

বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খণিজ সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়েশা খান দ্য থার্ড পোলের সাথে আলাপকালে বলেন, সরকারকে কার্বন নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে হলে প্রথমেই গ্যাস ও বিদ্যুতের অপচয় রোধ নিয়ে কাজ করতে হবে। ১০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে গঠিত এই কমিটি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করে থাকে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা বাসাবাড়িতে রান্না ও অন্যান্য কাজে গ্যাস সরাবরাহ করে থাকি। এসব ক্ষেত্রে গ্যাস ব্যবহারকারীরা যে পরিমান গ্যাস ব্যবহার করে থাকেন না কেন, সরকারকে তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমান ফি প্রদান করে থাকেন। ফলে গ্যাসের অপচয় হবার একটি প্রবল সম্ভাবনা রয়েই যায়। এই অপচয় রোধে আমরা গৃহস্থালী ও কারখানায় ব্যবহারের জন্য সকল পর্যায়ে প্রিপেইড মিটার সংযুক্তির জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছি। সরকার ব্যাপক ভিত্তিতে প্রিপেইড মিটার চালু করলে নিদেনপক্ষে এই দুটি সেক্টর থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

দেশে আরো ব্যাপক ভিত্তিতে সৌর শক্তি ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে উন্নয়ন কার্য ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান সাবেক জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী এম তামিম। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের পরিমান হ্রাস করা সম্ভব হবে।  তবে বৃহৎ আকারে সৌর বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তাবয়ন করতে হলে যে বিস্তীর্ণ পরিমান ভূমি প্রয়োজন বাংলাদেশের মতো স্বল্প সমতলের দেশে সে পরিমান ভূমি নেই বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের জ্বালানী ক্ষেত্রে উত্তরনে ধনী দেশগুলোর উচিত অগ্রসরগামী ও আধুনীক সৌর বিদ্যুত প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করা যার মাধ্যমে আরো দক্ষভাবে স্বল্প স্থানের ভিতরেই এ ধরনের প্রযুক্তি স্থাপন করা সম্ভব হয়

বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রযুক্তি স্থানান্তরে প্রস্তুতি

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানী ক্ষেত্রে প্রথাগত অবস্থান থেকে আধুনীক প্রযুক্তি স্থানান্তরে এখানকার অপ্রচলিত বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক একটি বিরাট বাঁধা। সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম তামিম বলেন, আমরাদের সরাবরাহ নেটওয়ার্ক একদমই আধুনীক নয়, বর্তমানে যে পরিকাঠামো রয়েছে তাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানী বাস্তবায়নে ১০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বিদ্যুত সঞ্চালন নেটওয়ার্ক আধুনীক না হওয়ার কারনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য প্রস্তুত নয়। এর ফলে সঞ্চালন লাইনে দিনের যে কোনো সময় অতিরিক্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানী সরাবরাহ করা হলে অতিরিক্ত চাপে ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পুড়ে যেতে পারে। তামিম বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা বর্তমানে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে, তবে আরো আধুনিক প্রযুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে সঞ্চালন লাইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। এর ফলে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সরাবরাহ আরো সহজ হবে।

তামিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে দেশের বিদ্যুৎ গ্রিড পরিবর্তনে বাংলাদেশের কমপক্ষে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।

 এবারের কপ- ২৬ সম্মেলনে বাংলাদেশ যোগ দিতে যাচ্ছে একটি স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে যাতে রয়েছে আগামী দশকগুলোতে দেশের অর্থনীতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী  খাতে নির্দিষ্ট পরিমানে জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের পরিকল্পনা। পাশাপাশি এই সম্মেলনে আগামী দশকগুলোতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী ক্ষেত্রে প্রযুক্তি উত্তরনে সরকারের আরো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ নিয়ে হাজির হতে চায় দেশটি। তবে দেশের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সরকারকে এই পথে চলতে হলে অবশ্যই উন্নত অবকাঠামো ও অভিযোজন পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে এবং সেজন্য প্রয়োজন আর্থিক প্রবাহের নিশ্চয়তা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজের লেখা নিবন্ধে বলেছেন, আগামীতে একটি শূণ্য-কার্বন ভবিষ্যত গড়ে তুলতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর যে পরিমান অর্থের প্রয়োজন তার  তুলনায় বছর প্রতি এই দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অতি নগন্য। যদি পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা এই ক্ষেত্রে বিজ্ঞান কী বলছে তা উপলদ্ধি করেন এবং নিজেরা এই বিষয়গুলোত সংযুক্ত হয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন তাহলেই কেবল এবারের সম্মেলন সফল হতে পারে।  তিনি বলেন, এখনও সময় আছে এবারের এই কপ-২৬ কে সফল করার যা আসলেই এ মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরী।