icon/64x64/climate জলবায়ু

মতামত: নদীর স্বীয় আইনগত অধিকারের প্রতি সম্মান ও স্বীকৃতির সময় এখনই

জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের হানী এবং অন্যান্য দুর্যোগে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্থ্য প্রকৃতির পুনরুজ্জীবনে এখন প্রাগৈতাহাসিক সমাধানগুলোর পথে এগুচ্ছে বিশে^র বহু দেশ। বিশ্বের অনেক দেশ এখন তাদের আদালত ও আইন সভার মাধ্যমে প্রকৃতিকে সুসংহত রাখতে তাকে মানুষের আইনী অধীকারের সমতূল্য মর্যাদা প্রদান করছে

এটি নিয়ে একশ বছর ধরে মাউরি সম্প্রদায় আন্দোলন চালিয়ে গেলেও ২০১৭ সালে দেশটির আইন সভা (পার্লামেন্ট) এই দাবীর প্রতি স্বিকৃতী দেয়। তে আওয়া টুপুয়া কিন্ত কোনো মনুষ্য ব্যক্তিত্ব নয়, ঠিক যেমনটি কর্পোরেট সংস্থাগুলোর সৃষ্টি অনেক কিছুই মানুষের মতোই কিছু অধিকার ভোগ করে। বরং এটি একটি দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক বৈচ্যিত্রের সমন্বয়ে গঠিত এক প্রাকৃতিক পরিবেশ যা ২৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ মনোমুগ্ধকর ওয়াংগানুইউ নদীসহ প্রকৃতির যাবতীয় শারীরিক ও রুপক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত এক অনন্য স্থান। তে আওয়া টুপুয়াকে জীবন্ত সত্তার আইনী স্বিকৃতী প্রদানের এই অনবদ্য ঘটনা এখন বিশ্বব্যাপী নদ-নদী ও মিঠা পানির পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে “প্রকৃতির অধিকার” নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে এবং চলমান এই আন্দোলনকে এর ফলে আরো বেগবান হবে বলে মনে করা হয়।
সাইরাস আর. ভ্যান্স সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস নামের একটি সংস্থার সাথে যৌথভাবে পরিচালিত আমাদের নতুন একটি গবেষণায়  দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী বহু দেশের সরকার, সংশ্লিষ্ট আদালত, আইনসভা এবং আদিবাসী কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে প্রকৃতিকে জীবন্ত সত্তার অধিকার প্রদানের ঘটনা বাড়ছে, বিশেষ করে নদীর ক্ষেত্রে এই প্রচেষ্টা তুলনামূলকভাবে বেশি। এ বিষয়ে ব্যাপকভিত্তিক বিচারিক ও আইনী সিদ্ধান্ত লক্ষ্য করা যায় সাম্প্রতিক সময়ে। এ সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তগুলো ২০১০ ও ২০২০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলাদেশ, কলম্বিয়া, উগান্ডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রহন করা হয়। এবছর সেপ্টেম্বর মাসে ইকুয়েডরের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন খনিজ আহরণকারীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য দেশটির অতি সমৃদ্ধ একটি মিঠাপানির বাস্তুসংস্থান সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে ‘প্রকৃতি অধিকার সংরক্ষণ’ আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের আবেদন জানায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি আদিবাসী সংগঠন নদীকে একটি জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বিকৃতী দিয়েছে। এর মধ্যে ইউরোক সম্প্রদায়ের ক্লামাথ নদী এবং নেজ পেরেজ সম্প্রদায়ের  স্নেক নদীকে স্বিকৃতীর ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

দক্ষিণ এশিয়ায় এ বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত এক যুগান্তকারী রায় দেয়। এতে বলা হয় দেশের সব নদ-নদী এখন থেকে ‘জীবন্ত সত্তা’র অধিকার প্রাপ্য হবে। এই নীতি বাস্তবায়ন ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকার এরই মধ্যে একটি স্বাধীন সংস্থাকে দায়িত্ব প্রদান করেছে। ভারতে চলতি বছর মার্চে পাঞ্জাব ও হারিয়ানা রাজ্যের হাইকোর্ট এক আদেশে চন্ডিগড় শহরের সুখনা হ্রদকে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে অভিহীত করে। এই আদেশের মধ্য দিয়ে সুখনা হ্রদ একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকারসমূহ ভোগ করবে। সিদ্ধান্তটি মূলত ২০১৭ সালে ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের হাইকোর্টের এক যুগান্তকারী রুলিংয়ের ধারাবাহিকতা। হাইকোর্টের সেই রুলিংয়ে গঙ্গা ও যমুনা নদীকে ব্যক্তি সত্তার স্বিকৃতী দেয়া হয়। অবশ্য পরবর্তীতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই আদেশের উপরে স্থগিতাদেশ জারী করে।

গঙ্গা নদীর যদি একজন ব্যক্তির মতোই আইনগত অধিকার থাকতো, তবে এই নদীতে মানুষের স্নান করার সুযোগ কি অবারিত থাকতো [ছবি: এরিক পারকার]
গঙ্গা নদীর যদি একজন ব্যক্তির মতোই আইনগত অধিকার থাকতো, তবে এই নদীতে মানুষের স্নান করার সুযোগ কি অবারিত থাকতো [ছবি: এরিক পারকার]

ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছে আমাদের আইনী ব্যবস্থা

বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের আশংকাজনক ক্ষয়ক্ষতির বিষয় নিয়ে করণীয় শীর্ষক জাতিসংঘ সম্মলনের মাঝেই আমাদের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বিপন্ন জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় প্রকৃতির অধিকার নিশ্চিতকরনে দেশে দেশে নেয়া নানা আইনগত পদক্ষেপগুলোর নজির তুলে ধরা হয়। এ ধরনের আইনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে এরইমধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। বলা বাহুল্য যে এমন ইতিবাচক সুফল কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে পাওয়া সম্ভব নয়।

নদী আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীর জন্য প্রানী শরীরে নিরন্তর বয়ে যাওয়া রক্তপ্রবাহের মতোই। বেঁচে থাকার জন্য পানি পান করা প্রয়োজন। আমরা পানির জন্য এই নদীর উপরই নির্ভর করি। মৎস, কৃষি এমনকি বিনোদনের জন্যেও আমরা নদীর উপরে নির্ভরশীল। আবার অনেক নদী রয়েছে যা আমাদের জন্য পবিত্র। নদী কেবল পানি বুকে নিয়েই বয়ে চলে না। বরং নদীর প্রবাহে সাথে যুক্ত জীবন,  মাছ, পাখি ও আরো অনেক প্রানী। আর এই সবকিছুর উপরেই প্রভাব তৈরি করে নদী নিরন্তর বয়ে চলে উৎস থেকে সাগরের দিকে। ঠিক যেমনটি বলা হয়েছে উত্তরাখন্ড হাইকোর্টের ২০১৭ সালের এক আদেশে “পর্বতের শিখরে জন্মে নদী বয়ে চলে সাগর পানে, পথে নদীর জীবন সঞ্চার হয়, জীবন্ত প্রানের মতোই থাকে তার শ্বাস-প্রশ্বাস আর সেই সাথে চলার পথে দু’পাড়ে গড়ে ওঠা জনপদের মানুষ এই নদীকে ঘিরেই সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’
কিন্তু এই নদীকে ধীরে ধীরে হত্যা করছি আমরা। দূষণ, বাঁধ আর জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগ আমাদের এই জলপথকে এক গভীর সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ এর তথ্য মতে, প্রতি তিন জনের মধ্যে দু’জনই প্রতি বছর কমপক্ষে এক মাসের জন্য মিঠা পানির ঘাটতি অনুভব করে এবং ১৯৭০ সাল থেকে মিঠা পানির উপরে নির্ভরশীল প্রানীর জনসংখ্যা ৮০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।

দূর্ভাগ্যক্রমে, নদীর তীব্র নিম্ন প্রবাহ পুরোপুরি অনুমানযোগ্য। বেশিরভাগ আইনী ব্যবস্থা নদীগুলোকে কেবল মানুষের সম্পত্তি হিসাবে বিবেচনা করে, যার নিজস্ব কোনও অধিকার আছে বলে মনে করা হয় না। আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই নদীর যথেচ্ছ ও অযাচিত শোষণকে বলতে গেলে একপ্রকার উদ্বুদ্ধ করা হয় – কেবল মাত্র লাভের আশায় নদীর পানি, এর উপরে নির্ভরশীল বিভিন্ন প্রানী ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যকে বিনষ্ট করা হয়। পরিবেশ আইনের মাধ্যমে এক্ষেত্রে কিছুটা সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও আইন বরাবরই এই সমস্যা সমাধানের মূলে গিয়ে পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

নদী ও বনাঞ্চলকে আইনী ব্যক্তি স্বত্তা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে

একথা ভাবার আজ আর কোনো অবকাশ নেই যে পানি ও নদীকে একটি পন্য হিসেবে দেখে ক্রমাগত এদেরকে কেবল শোষণ চালিয়ে যাওয়া যাবে। প্রকৃতি কাঠামোর অধিকারের বিষয়টির মধ্য দিয়ে একথা মনে করা হয় যে প্রকৃতির নিজস্ব ধরণ রয়েছে যা অবশ্যই মানুষকে সম্মান করতে হবে। বরং গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নদীর ক্ষতি করার কারনে নদীর পক্ষ থেকেই সরাসরি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে। কারণ নদী কোনোভাবেই মানুষের মালিকানাধীন কোনো সম্পত্তি নয়। প্রকৃতির অধিকারের বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক গ্রহনযোগ্যতার মাধ্যমে দেশের আদালত ও সংশ্লিষ্ট আইনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম ও যারা এই নদীর উপরে সরাসরি নির্ভরশীল তাদের জন্য প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

যদিও অনেকের কাছেই বিষয়টিকে গল্প-উপন্যাসের মতো মনে হতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে প্রকৃতির নিজস্ব আইনী অধিকারের বিষয়টি আমাদের আধুনীক আইনী ব্যবস্থার মধ্যে খুব সহজেই অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব। আইন সব সময়ই ‘মানুষ নয় এমন আইনী স্বত্তা’র অস্তিত্বকে স্বিকৃতী দিয়েছে। যদি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান (কর্পোরেশন) আর জাহাজকে আইনগতভাবে ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে তাহলে অবশ্যই নদী বা বনের আইনী ব্যক্তি পরিচয় থাকতে কোনো বাঁধা থাকতে পারেনা। প্রয়োজন হলে আমরা বিষয়টিকে নতুনভাবে চিন্তা করে আইনের পরিকাঠামোর মধ্যে থেকেই অধিকারভোগকারীর নতুন অধ্যায় সংযোজন করতে পারি।

ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠান, জাহাজ আর শিশুদের যেমন মতামত প্রকাশের জন্য আইনগত প্রতিনিধি বা অভিভাবক থাকতে পারে, একইভাবে  স্বার্থহানী হলে তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপনের জন্য নদীরও অভিভাবক হতে পারে। ১৯৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি উইলিয়াম ডগলাস তার এক মন্তব্যে বলেছিলেন, নদী বা পানির সাথে যে বা যাদের অর্থপূর্ণ সম্পর্ক থাকে যেমন – একজন মৎসজীবি, কিংবা একজন মাঝি বা একজন প্রানিবিদ নদীর পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।

বর্তমান সময়ের এই প্রেক্ষাপটে উইলিয়াম ডগলাসের সেই মন্তব্যটি যেন এক বাস্তবতা হিসেবে আমাদের সামনে উপনীত হয়েছে। সারাবিশে^র প্রচলিত আইন ও আদালত নদীর পক্ষে কথা বলার জন্য বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করে দিয়েছে এবং তার স্বকিৃতীও রয়েছে। তে আওয়া টুপুয়া’র প্রতিনিধিত্ব করে একটি কমিউনিটি ভিত্তিক সংঘ যেটি দেশটির সরকার ও স্থানীয় মাউরি সম্প্রদায় দ্বারা স্বিকৃত। কলম্বিয়ার সাংবিধানিক আদালত দেশটির আতরাতো নদীর ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সমন্বিত সংস্থা তৈরি করে দিয়েছে যেটির দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে নদীটির সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার। সম্প্রতি আমাদের পাশ^বর্তী দেশ ভূটানের রয়েল কোর্ট অব জাস্টিস একটি নতুন আইন প্রনয়ন করেছে। এই আইনের আলোকে যে কোনো ব্যক্তি “প্রকৃতির ষ্ট্রাটি” হিসেবে প্রকৃতি/পরিবেশ সুরক্ষার দাবীতে যে কোনো ধরনের মামলার মাধ্যমে আদালতের দ্বারস্থ্য হতে পারবে। আমাদের গবেষণা বলছে প্রৃকতির আইনী অধিকারের বিষয়টি সারা বিশে^ এখন আর কেবল ধারণার মধ্যে আটকে নেই: এটি এখন আসলেই একটি বাস্তবতা।

আইনজীবি, কর্মী আর বিজ্ঞানীদের নিয়ে একটি অত্যন্ত সুসংহত দল বিশ্বব্যাপী প্রকৃতি অধিকার আন্দোলন নিশ্চিত করতে জোর কাজ করে যাচ্ছে। আদিবাসী বিভিন্ন গোষ্ঠী ও এ সংক্রান্ত ধারণাগুলো এই  আন্দোলনকে সফলতার পথে পরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তে আওয়া টুপুয়া হচ্ছে একটি চুক্তির অংশ যেটি নিষ্পত্তি হয়েছিল সংশ্লিষ্ট সরকারের সঙ্গে মাউরী জনগোষ্ঠির আলোচনা প্রেক্ষিতে। আর আতরাতো নদীর পরিচালনায় কাজ করে সেখানে বসবাসরত  আদিবাসী ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত সম্প্রদায় যারা শত শত বছর ধরে ওই নদীটির উপরে নির্ভর করে আসছিল। পাশ্চাত্য আইন ব্যবস্থা এমন অনেক ক্ষেত্রেই আদিবাসীদের আইন ব্যবস্থার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। মাউরী ‘কাইতিয়াকিতাঙ্গা’ (ষ্টুয়ার্ডশীপ) এবং আন্দিয়ার সুমাক কাওসায় (ভালো থাকা) – এর মতো ধারনাগুলো এমন কিছু বিশ^দর্শন যার মাধ্যমে এটাই প্রতিফলিত হয় যে মানুষ প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধ। এই নীতিগুলো আনুষ্ঠানিক এবং প্রথাগত আইনে অন্তর্নিহিত করলে দেখা যাবে আদিবাসী ব্যবস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীলতা ও অংশীদারিত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। প্রকৃতির আইনী অধিকারের ভাবনা আমাদের অন্যান্য আইন ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কে আরো গভীরভাবে জানার সুযোগ করে দেয়।

যেহেতু প্রকৃতির অধিকার সংক্রান্ত আইন ও নীতির বিষয়টি অনেক সুদুরপ্রসারী, তাই নেতৃত্বশীল পরিবেশবাদী সংগঠন, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, আদিবাসী নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য সমমনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান একটি নদী অধিকার সংক্রান্ত একটি সার্বজনীন ঘোষনার পথে অগ্রসর হচ্ছে। এই ঘোষনায় বলা হবে কোন কোন বিষয়গুলো একটি নদীর একান্ত অধিকার হিসেবে বিবেচিত হবে। যেসব দেশ নদীর আইনী অধিকারের বিষয় নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে তাদের জন্য এই ঘোষনাটি আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মেক্সিকোর ওয়াক্সাকার রাজনীতিবিদ জর্জ অক্টাভিও ভিলাকাসা জিমনেজ এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে অনুপ্রানিত হয়ে রাজ্য-ভিত্তিক নদীর অধিকার সংক্রান্ত আইন প্রনয়নের প্রস্তাব করেছেন। আরো অনেক দেশে অচিরেই এমনটি শুরু হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

প্রকৃতির অধিকারের বিষয়টি আসলে কোনো পঞ্চশক্তি নয়। আমাদের দীর্ঘ অবহেলিত নদীগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে হলে সরকার, আদালত, বিভিন্ন সংস্থা এবং সুশীল সমাজকে সাথে নিয়ে ব্যাপক এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহন করার প্রয়োজন হবে। তবে প্রকৃতির অধিকারের ধারনাটি ব্যাপক ভিত্তিক কার্যক্রমের একটি কর্মপরিকল্পনা নির্দেশ করে। এর মধ্য দিয়ে প্রচলিত আইনী ব্যবস্থার প্রতি আমাদের নৈতিক ও আধ্যাত্বিক বাধ্যবাধকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং সুদূরপ্রসারী কার্যকরযোগ্য অধিকার এবং দায়িত্ববোধ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রকৃতির আইনী ব্যক্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া আমাদের জন্য একান্ত অপরিহার্য। কারন আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং পরিবেশের প্রতি আমাদের রয়েছে অনেক ঋণ।

মন্টি আগুইর ইন্টারন্যাশনাল রিভার্স-এর ল্যাটিন আমেরিকা সমন্বয়ক; গ্র্যান্ট উইলসন আর্থ ল’ সেন্টার-এর নির্বাহী পরিচালক

অনুবাদ: আরিক গিফার

একটি মন্তব্য যোগ করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.