icon/64x64/climate জলবায়ু

মতামত: বাইডেনের বিজয় আর বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তি

সিনেটের পক্ষ থেকে এখনও বাঁধা পেরুতে না পারলেও, জো বাইডেনের প্রশাসন বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গৃহীত চলমান পদক্ষেপগুলোতে যথেষ্ট দৃঢ় ও অর্থবহ সমর্থন রয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের এই অবস্থান অন্যান্য দেশগুলোর জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে যা তারা অনায়াসেই অনুসরণ করতে পারে

আগামী বছর ২০ জানুয়ারি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারো যুক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন জো বাইডেন। এই সময়ের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহন সম্পন্ন করতে পারবেন বলে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।  কিন্তু এটি আসলে বিশাল এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কেবলই প্রথম পদক্ষেপ, কারন এই সময়ের মধ্যেই হয়ত তাকে এনিয়ে সিনেটে আগাগোড়াই বিরোধীতার মুখোমুখি হতে হবে। সিনেটে গণতান্ত্রিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তিনটি মূল ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ নির্ধারনী সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে গ্রহন করতে হবে।

নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বিনিয়োগ

সবার আগে যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে নিজ দেশের ভিতরেই নবায়নযোগ্য শক্তি (বিদ্যুত,জ্বালানী ইত্যাদি) ব্যবহারে উৎসাহিত করতে পদক্ষেপ নেয়া এবং এটিই হবে প্রাথমিক অবস্থায় সবচেয়ে সহজতর কাজ। রিপাবলিকান অধ্যুষিত টেক্সাসসহ দেশটির অনেক অঙ্গরাজ্যই এরই মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারকে ব্যাপক উৎসাহিত করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। ধারণা করা হয় এক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো বিরোধীতার মুখোমুখি পড়বে না বাইডেন প্রশাসন।  নির্বাচনের প্রচারনা সময় বাইডেন বহুবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, দেশে পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশের জাতীয় বিদ্যুত গ্রিডে নবায়নযোগ্য বিদ্যুত যুক্ত করতে ২ ট্রিলিয়ন মার্র্কিন ডলার ব্যয় করবে তার সরকার। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে দেশে বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহার ও বিদ্যুত/ জ্বালানী সাশ্রয়ী আবাসন নির্মানে রাষ্ট্রীয়ভাবে আরো বেশি উৎসাহ দেয়া। যদিও কংগ্রেসের জন্য এই ধরনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করাটা অনেক বেশি কঠিন, তবে বিশাল এই প্রনোদনার একটি বেশ বড় অংশ প্রস্তাবিত কোভিড-১৯ পুনরুদ্ধার প্যাকেজ থেকে আসতে পারে।

ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানীতে প্রনোদনা কমিয়ে আনাটা বাইডেনের জন্য কিছুটা কঠিনই হবে, কারন তার অনেক সমর্থকই এটা চান। এরচেয়েও কঠিন যে বিষয়টি তা হচ্ছে বাইডেন এখন পর্যন্ত চাইছেন কানাডা থেকে যে কিস্টোন পাইপলাইন রয়েছে সেটি বন্ধ করে দেয়া। এটি হয়ত তিনি পরবর্তীতেও করতে পারতেন। এবং বাইডেন এখনও পর্যন্ত ফ্্র্যাকিং (গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিশেষ এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভূমির একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রচুর পরিমানে চাপ সৃষ্টি করে তরল প্রবেশ করানো হয়)।

আরেকটি সমালোচনাধর্মী কাজ হতে পারে ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট-এর (নির্মল বায়ু আইন) আওতায় দুষণসৃষ্টিকারীর তালিকায় গ্রীন হাউস গ্যাসকে (জিএইচজি) অন্তর্ভূক্ত করা। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে কেউ আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এবং তার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ফেডারেল সুপ্রিম কোর্ট অতি স্বল্প সমর্থন নিয়ে আসা এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আইনে পরিবর্তন আনার ব্যাপারটিকে সমর্থন করতে নাও পারে। অনেকেই মনে করছে বাইডেন এক্ষেত্রে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কার্যকর কিছু না করে হয়ত সমর্থকদের হতাশ করতে পারেন।

তবে বাইডেন প্রশাসন জলবায়ু সংক্রান্ত কোনো বড় ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে চায় তাহলে সাম্প্রতিক মতামত জরিপ একটি শক্ত ভিত্তি হতে পারে। আর এই জরিপে ৭০ শতাংশ আমেরিকাবাসী বারবার বলেছে যে তাদের সরকার জলবায়ু সংকট নিয়ে যেন আরো বেশি কাজ করে।

জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণায় অর্থায়ন

এরপর কাজের আরেকটি বড় বিষয় হতে পারে জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষনার কাজে আর্থিক সহায়তা বা অর্থায়ন বৃদ্ধি করা এবং ইউএস এনভায়রনমন্টোল প্রোটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) পূণর্গঠন করা। ট্রাম্পের ক্ষমতাকালীন সময় এবং এর আগে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা প্রকাশনার সংখ্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্তসরকারী প্যানেলে লেখকের সংখ্যার হিসেব করলে যে কেউই বুঝতে পারবে যে ২০১৮ সালে লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির এক গবেষক দ্য থার্ড পোলকে এনিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন তা যথার্থ কি না। তিনি বলেছিলেন, আমি একটি শূন্য ল্যাবরেটরিতে একা বসে আছি আর আমার উচ্চতর গবেষণাকারী শিক্ষার্থীরা এই ল্যাবরেটরি ছেড়ে চলে গেছে ইউরোপে।

গত তিন দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এত বিরাট সংখ্যক নামকরা প্রথমসারীর জলবায়ু গবেষক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যে বিগত চার বছরে নতুন গবেষক তৈরি হওয়ার প্রবনতা কমে যাওয়ায় বিশ^ব্যাপি জলবায়ু বিজ্ঞানে দেশটির অবদান মারাত্বকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাইডেনের হোয়াইট হাউস এক্ষেত্রে নির্বাহী সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে ও গবেষনাগারে অর্থায়নের মধ্য দিয়ে এই ফারাকটি অনেক কমিয়ে আনতে পারে। ক্যাপিটাল হিলের সহায়তার মাধ্যমেও এ বিষয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব। কিন্তু ধারনা করা হচ্ছে তেমনটি হয়ত না হবার সম্ভাবনাই বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণা কাজে মনে হচ্ছে আগামী আরো দুই বছর অত্যন্ত স্বল্প পরিমানে অর্থ বরাদ্ধ থাকতে পারে।

তবে হোয়াইট হাউস কমপক্ষে সক্ষম ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ইপিএ পূনর্গঠন করতে পারে। একটি শক্তিশালী ইপিএ অনেক কাজ করতে সক্ষম, বর্তমানে যেসব আইন রয়েছে তার মধ্যে থেকেই এটি সম্ভব। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসন কমপক্ষে ৮০টি পরিবেশ সংক্রান্ত আইন বাতিল করে দেয়ার পরেও।

ট্রাম্পের করে যাওয়া অনেক কাজ বা সিদ্ধান্ত নির্বাহী সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বাতিল করে দেয়ার মধ্যে যে ঝুঁকিটি রয়ে যাবে তা হচ্ছে ভবিষ্যতে আরেকটি রিপাবলিকান প্রশাসন ক্ষমতায় এলে তা আবারও বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কিছু কিছু বিষয়ে এমন শক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া বাইডেনের হাতে তেমন কোনো সুযোগও নেই।

বৈশ্বিক উচ্চাকাংক্ষার ফলাফল

নতুন এই সরকারের জন্য সবচেয় কঠিন কাজ হবে তৃতীয় ক্ষেত্রে: সেটি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ^ব্যাপি যুদ্ধ। নিজ দেশে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং দাবানলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ বেশিরভাগ রিপাবলিকানদের হয়ত তেমন নাড়াতে পারেনি। এটি আরো পরিস্কার যে বিশে^র অন্যান্য অনেক দেশে ঘটে যাওয়া জলবায়ু পরিবর্তন সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞে তারা ছিলেন আরো অনেক বেশি উদাসীন। বাইডেন-হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচরণার জলবায়ু পরিবর্তন অংশে যে চারটি অগ্রাধীকারভিত্তিক কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো একটু ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে যে কেউই বুঝতে পারবে যে সংশ্লিষ্ট এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

একথা বলাই বাহুল্য যে বিশ্বের দেশগুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে গ্রীন হাউস গ্যাস নি:সরণ হ্রাস না করলে পৃথিবীতে ঝড়, বন্যা, খরা বা দাবানলের মতো ঘটনা কেবল বাড়তেই থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করে থাকে কারন তারা এখনও বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গ্রীন হাউস গ্যাস দূষণকারী  দেশ হিসেবে রয়ে গেছে। প্যারিস চুক্তিতে পুনরায় প্রবেশের পরপরই বাইডেন প্রশাসনকে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নের মুখোমুখি তা হচ্ছে কার্বন নি:সরণ হ্রাসে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ কত ছাড় দেবে? একই সাথে সিনেটের বিরোধীতার পরেও নির্বাহী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেয়া প্রতিশ্রুতির মূল্যই বা কত হবে?

ওবামা প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র যখন প্যারিস চুক্তিতে যোগ দিয়েছিল তখন তারা ২০২৫ সালের মধ্যে জিএইচজি নির্গমনের মাত্রা ২৬ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার সম্ভবনা এই মুহুর্তে একদমই ক্ষীণ। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক জিএইচজি নির্গমনের মাত্রা ছিল ২০১৬ সালে বছরের শেষ দিকের চেয়েও বেশি, ঠিক যে সময় ট্রাম্প সরকারের দায়িত্ব গ্রহন করে।

নতুন করে কোনো প্রতিশ্রুতির সময়সীমা ২০২০ সালের শেষভাগ পর্যন্ত উন্মুক্ত ছিল। অথচ কোনো দেশই এই সময়সীমার মধ্যে তাদের প্রতিশ্রুতির কথা জানাতে পারেনি। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে এই সময়সীমা হয়ত আবারো বৃদ্ধি করা হবে।

জিএইচজি নি:সরণ হ্রাসে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিশ্রুতি অন্যান্য দেশের উপরে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। আগামী ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। এক্ষেত্রে ইইউ, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নিজেদের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে ২০৫০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু অনেক উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশ এখনও অপেক্ষা করে আছে এনিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কী করে তা দেখার জন্য। এসব দেশের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ভারত যেটি বিশ্বের মধ্যে চুতর্থ বৃহত জিএইচজি নির্গতকারী দেশ।

নিজেদের প্রচারকালীন সময়, বাইডেন বলেছিলেন তার সরকার আগামী ২০২৫ এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি কার্বনকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে উন্নীত করার কাজ করবে। এটি আসলে একটি উচ্চাকাংক্ষা তবে অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য যা অন্যান্য অনেক দেশকেই উৎসাহিত করবে, বিশেষ করে যদি এই সিদ্ধান্তটি সিনেটের সমর্থন পায়।

তবে প্যারিস চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রকে স্বল্পমেয়াদী একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে, যেমন ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটি কী করতে চায়। এটি আসলে বাইডেনের জন্য আরো বেশি কঠিন হতে পারে। তবে এছাড়া বাইডেনের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদী কোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা বা সেই পথে হাঁটা আরো জটিলতর হবে বলে মনে হচ্ছে।

ট্রাম্পের গত চার বছরের শাসনামলের মধ্যে অনেক দেশই এক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ভারত এরই মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানী/শক্তি ব্যবহারের পথে যে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রেক্ষিতে দেখা যাচ্ছে দিনে সুর্য্যরে আলো থাকতে সৌর বিদ্যুত এখন সবচেয়ে সহজলভ্য শক্তির উৎস। আগামী দুই বছরের মধ্যে দিনের সবসময়ই নবায়নযোগ্য জ্বালানী নির্ভর বিদ্যুতের মূল্য কয়লা বিদ্যুতের মূল্যের চেয়ে সাশ্রয়ী হবে। এব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে নয়াদিল্লির দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইন্সটিটিউটের প্রধান অজয় মাথুর বলেন, এখন সময় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল কথার পিঠে কথা নয় বরং জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন কার্যকর কৌশল গ্রহনের মাধ্যমে নিজেদের নেতৃত্ব দেখাতে হবে।

আন্তর্জাতিক আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধি

জলবায়ু সংকট নিয়ে সারা বিশ্বের চলমান আলোচনার ইতিহাস ঘাটলে একটি বিষয় খুব পরিস্কার বুঝা যায়। আর তা হচ্ছে এনিয়ে রিপাবলিকানদের কোনো ধরনের নেতিবাচক ভীতিতে ভোগার কোনো অবকাশ নেই। কারন মার্কিন দেনদরবারকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহনে কোনো ভাবেই একবিন্দু ছাড় দেবে না। এটি একেবারেই দলমত নির্বিশেষে মার্কিনীদের একটি বৈশিষ্ট্য। সেই ক্লিনটন প্রশাসনের সময় থেকেই সারা বিশ্ব যখন ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর (ইউএনএফসিসিসি) নেতৃত্বে জলবায়ু সংকট নিয়ে করনীয় নির্ধারনী আলোচনা করছিল সেই সময়েও মার্কিন প্রতিনিধিরা এমন কোনো বৈশি^ক সিদ্ধান্তে সায় দেয়নি যেটি তারা মনে করেছেন মার্কিন স্বার্থ বিরোধী।

প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে গিয়ে ট্রাম্প একটি অভাবনীয় পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি যে কেবল প্রথমবারের মতো একটি বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা, তা নয়। এর আগে কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর করেছিল তৎকালীন ক্লিনটন প্রশাসন। কিন্তু পরবর্তীতে জর্জ বুশ জুনিয়রের সরকার এই চুক্তিতে অনুমোদন দেয়নি। এর মধ্য দিয়ে চুক্তিটিকে এক প্রকার হত্যা করা হয়।

সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর প্রধান সুনিতা নারায়ন তাদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘ডাউন টু আর্থ’-এর নিবন্ধে উল্লেখ করেন, কংগ্রেস এর পরিবর্তে বায়ার্ড-হেগেল সংশোধনীটি পাশ করে যার মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক যে কোনো বৈশ্বিক চুক্তির সাথে মার্কিন সংযুক্ততা থাকলে তা অবশ্যই অন্যান্য সহযোগী উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিশ্রুতির সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিটি এই সংশোধনীটিকে শাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছিল। এটি ধনী দেশগুলোর দীর্ঘদিনের নীতিকে একপ্রকার ধূলিষ্মাত করে দেয়, এই ধনী দেশগুলোই বায়ুমন্ডলে সবচেয়ে বেশি জিএইচজি নি:সরণ ঘটিয়ে আসছে এবং এই জঞ্জাল এড়ানোর দায় কিন্তু কেবল এইসব দেশের উপরেই বর্তায়।

প্রেসিডেন্ট যেই হোক না কেন, বৈশ্বিক ফোরামে মার্কিন প্রতিনিধিরা সবসময় নিশ্চিত করেছেন এই দায় যেন তাদের উপরে কেবল না আসে। প্রতিবছরই ইউএনএফসিসিসি সম্মেলনে মার্কিন প্রতিনিধিরা তাদের একদল আইনবিদ নিয়ে হাজির হন যাদের কাজ হচ্ছে প্রতিটি নিদ্ধান্তের প্রত্যেকটি শব্দের খুটিনাটি বিশ্লেষন করে দেখা এবং মার্কিন স্বার্থ হানি হয় এমন কোনো বিষয় সেখানে উল্লেখ আছে কিনা তা খুঁজে বের করে দেখা। তারা প্যারিস চুক্তির কার্যক্রম প্রায় একদিনেরও বেশি সময় ধরে স্থগিত রাখতে বাধ্য করেছিল চক্তির কেবল একটি শব্দ  shall  থেকে should পরিবর্তন করার জন্য। এটি ঠিক যে বাইডেন আমলেও মার্কিন বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে কঠিন ভূমিকা অব্যাহত রাখবে। কিন্তু যেহেতু আজকের এই দিনে সবুজ বিকল্প অর্থনীতি একটি উত্তম পহ্না হিসেবে বিবেচিত, তাই পূর্বের সেই মনোভাব হয়ত দেশটির নীতি নির্ধারকদের কাছে এখন একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হবে না।

অনুবাদ: আরিক গিফার

একটি মন্তব্য যোগ করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.