জলবায়ু

বাংলাদেশের জলবায়ু দূত: ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ভিক্টিম না হয়ে আমরা চাই অভিযোজনে নেতৃত্ব দিতে’

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা এবং এটির বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে কথা বলেছে দ্য থার্ড পোল
বাংলা
<p>সাবের হোসেন চৌধুরী (ছবি: মোসাব্বের হোসাইন)</p>

সাবের হোসেন চৌধুরী (ছবি: মোসাব্বের হোসাইন)

২০২১ সালে  বাংলাদেশ ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা‘ শীর্ষক একটি জাতীয় জলবায়ু কর্ম কাঠামো প্রকাশ করে। এটি দেশটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে। গ্লাসগোর জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কপ২৬-এ শেখ মুজিবের কন্যা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থাপন করেন। সেসময় তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামের সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছিলনে।

মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে শক্তিশালী আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা যার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনের মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এই লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে চরম দারিদ্র্য দূর করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসনে নতুন নতুন জলবায়ু-স্থিতিস্থাপকাতে ৪.১ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এছাড়া দূষণমুক্ত বায়ু এবং উন্নত গতিশীলতা বজায় রাখা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর কমপক্ষে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো।

উদ্যোগটি গ্রহনের পর থেকে গত প্রায় দুই বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি এড়াতে কী কী অর্জিত হয়েছে তা বুঝতে দ্য থার্ড পোল বাংলাদেশের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছে। গত জুন মাসে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। এই মুজিব পরিকল্পনাটির অগ্রাধিকার কী, এটি কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে এবং বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর নানা সম্ভাবনা সম্পর্কে বুঝতে সাবের হোসেন চৌধুরীর সাক্ষাৎকারটি গ্রহন করা হয়। তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি পাঠকের কাছে আরও স্পষ্টতার জন্য কিছুটা সম্পাদনা করা হয়েছে।

থার্ড পোল: মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা (MCPP) কী?

সাবের হোসেন চৌধুরী: জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যার প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতেও রয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে যদি প্রশমনের (মিটিগেশন) ব্যবস্থা না বাড়ানো হয় তাহলে আমরা ২০৫০ সালের মধ্যে জিডিপির ২ শতাংশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে ৯ শতাংশ হারাবে বাংলাদেশ। এই প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেয়া অত্যন্ত কঠিন।

কিন্তু মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি এবং নিজেদের প্রশ্ন করছি  যে কীভাবে আমরা এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে সমৃদ্ধির দিকে যেতে পারি। আমরা চাই না যে সবকিছুই ক্ষতির মুখোমুখি পড়ুক। এই কারণেই এই পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্ট সবকিছুই রাখা হয়েছে, যেমন: এটি অভিযোজন, প্রশমন এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজ। লস অ্যান্ড ড্যামেজ মোকাবিলা বা অভিযোজন কিংবা প্রশমনের দিকগুলো মোকাবিলার জন্য আমরা আমাদের স্থানীয় ধারণা ব্যবহার করব এবং এগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিগুলো এতে যুক্ত করব।

বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনে বাংলাদেশের অবদান ০.৫% এরও কম। তারপরেও আমরা প্রশমনে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা তাই এই পরিকল্পনাকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং জ্বালানি ব্যয় সংকোচনের একটি উপায় হিসেবে দেখি।

আমরা আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করতে চাই, তাদের জন্য সুরক্ষার মাত্রা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে শ্রমিক ও ব্যবসায়িদের সুরক্ষা দিতে চাই। এতে বেশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আমাদের অন্যতম কাজ হচ্ছে, বেকারত্ব কমানো এবং উচ্চ মানের টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেকারদের কর্মশক্তির মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা। আমরা আশা করছি আমরা আমাদের দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার করে আমরা জ্বালানি ব্যয় কমাতে সক্ষম হব।

গত অর্থবছরে, বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ২৫টি মন্ত্রণালয়ের জন্য ২ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (জিডিপির ০.৭৩ শতাংশ) বরাদ্দ করে। আমরা সেই অর্থ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সড়ক নির্মাণে ব্যয় করতে পারতাম। কারণ খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। এসব অধিকার থেকে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের নানাভাবে বঞ্চিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের এই অর্থ প্রশমন ও অভিযোজনে অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য করছে। আমরা জলবায়ু অভিযোজনের জন্য যেমন অর্থ বরাদ্দ করেছি যেমন তাপ এবং লবণাক্ততা সহনশীল ধান উৎপাদন, তেমনি আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং বন্যা এবং অন্যান্য দুর্যোগের সময় জরুরি খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধির জন্যও কাজ করছি।

থার্ড পোল: মুজিব জলবায়ু পরিকল্পনায় মূলত কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে?

সাবের হোসেন চৌধুরী: পরিকল্পনাটি মূলত দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সকলের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এতে অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কার্বন নির্গমণ, প্রযুক্তি উন্নয়নকে গুরুত্ব প্রদান করে। এ ছাড়া দেশের অর্থনীতির গতি ঠিক রাখতে  কীভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থের সংস্থান করা যায় সেটিকেও নির্দেশ করে। আমরা আশা করি যে ২০৩০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক এবং অন্যান্য বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের দেশের  ৩০% শক্তি হবে নবায়নযোগ্য এবং ২০৪১ সালের মধ্যে তা  ৪০% পর্যন্ত হবে। এতে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে।

প্রযুক্তি স্থানান্তর কি?

Technology transfer is the dissemination of designs, inventions, software or technical knowledge from one organisation to another in order to turn inventions and scientific findings into usable products and services.

চাকরির ক্ষেত্রে, [আমরা] কর্মক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি  ঠেকাতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা কারন এটি অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের কর্মীদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য এবং উৎদনশীলতার ঝুঁকির সম্মুখীন করে। আমরা আসলে কর্মী এবং ব্যবসায়িদের জন্য সুরক্ষা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছি।

থার্ড পোল: এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থায়ন। সরকার কীভাবে এটি মোকাবিলার পরিকল্পনা করছে?

সাবের হোসেন চৌধুরী: ঠিকই বলেছেন। অর্থায়ন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। আসলে পরিকল্পনা তৈরি করা এক জিনিস, আর এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা একটি উদ্বেগের বিষয়।

মুজিব জলবায়ু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এই ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করা বাংলাদেশের একার জন্য সম্ভব নয়। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে এই খরচ এলে তা আমাদের জন্য ভালো হবে।

মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় উল্লিখিত হিসাবে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নিয়ে জলবায়ু বিবেচনায় বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের মাধ্যমে আমরা অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব জোরদার করার চেষ্টা করব। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য দেশীয় বেসরকারি বিনিয়োগ এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে।

বাংলাদেশে প্রযুক্তি-হস্তান্তর অংশীদারত্ব এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। অভিযোজন প্রযুক্তিতে অংশীদারিত্বগুলো বন্যা সুরক্ষা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রযুক্তি, বিমা সরঞ্জাম, আরও জলবায়ু সংবেদনশীল ফসল, পানি ব্যবস্থাপনা, দক্ষ সেচ ব্যবস্থা এবং বিশেষত বন্যা অঞ্চলগুলির জন্য অনুসরণ করা যেতে পারে।

rows of flosting solar panels
বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় একটি ভাসমান সোলার প্ল্যান্ট (ছবি: সিনহুয়া/অ্যালামি)

পরিকল্পনাটি দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক এবং বাণিজ্যিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে জলবায়ু অভিযোজন এবং স্বল্প মাত্রার কার্বন উন্নয়নের চাহিদাকে চালিত করবে। একটি জলবায়ু বাণিজ্য সক্ষম করার ক্ষেত্রে এই পরিকল্পনাগুলো আলোচনার হাতিয়ার হিসাবে কাজ করতে পারে যা প্যারিস চুক্তির ১.৫ সি সীমা রক্ষার সাথে সংযুক্ত দেশগুলোর সাথে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে। একই সাথে, জীবাশ্ম জ্বালানী আমদানি হ্রাসের ফলে জলবায়ু সমৃদ্ধির ফলাফলের সাথে সংযুক্ত নয় এমন দেশগুলির সাথে বাণিজ্যের পরিমাণ হ্রাস পাবে।

বাংলাদেশে প্রযুক্তি-হস্তান্তর, অংশীদারিত্ব এবং উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। অভিযোজন প্রযুক্তিতে বিশেষত বন্যাপ্রবন এলাকাসমূহের জন্য বন্যা সুরক্ষা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রযুক্তি, বীমা সরঞ্জাম, আরও জলবায়ু সংবেদনশীল ফসল, পানির পুনর্ব্যবহার, পানি বিশুদ্ধকরণ, দক্ষ সেচ ব্যবস্থা এবং সেন্সর, অংশীদারিত্ব  অনুসরণ করা যেতে পারে।

থার্ড পোল: মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা কি এখন পর্যন্ত সফল হয়েছে?

সাবের হোসেন চৌধুরী:  যেহেতু এটি একটি নতুন উদ্যোগ, এটি চালু হতে কিছুটা সময় লাগবে। কারণ ধারণাটি নতুন এবং অন্যান্য জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কিত। আমরা আশা করছি যে মুজিব জলবায়ু পরিকল্পনার অধীনে প্রকল্পগুলি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ থেকে পুরোদমে শুরু হয়ে ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর আপডেট করা হবে। এটি কতটা কার্যকর হলো তা ২০২৫ সালে একটি পর্যালোচনার করা হবে।

টেকসই কৃষির ক্ষেত্রে একটি ভাল উদাহরণ হতে পারে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ, যার মাধ্যমে জলবায়ু অভিযোজন এবং উন্নয়ন সুবিধা গ্রহন করা যেতে পারে। এটি একটি নিম্ন বা এমনকি নেতিবাচক কার্বন শিল্প, যা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির মতো কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে যেসব ব্যয়বহুল পদক্ষেপ নেয়া হয় তার চেয়ে সহজ এবং এটি বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য মূলধনের প্রয়োজন হয় না। পাশাপািশ এটি রপ্তানি-কেন্দ্রিক একটি কৃষি পণ্য এবং এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধরণের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশের কক্সবাজার [দক্ষিণ-পূর্বে] এবং খুলনার দক্ষিণে উপকূলের চারপাশে একটি বৃহৎ কন্টিনেন্টাল শেলফ রয়েছে, তাই আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সাথে বিপণন অংশীদারিত্ব এবং চাষের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে আধুনীক পদ্ধতি ব্যবহার করে সামুদ্রিক শৈবাল পাইলট প্রকল্পগুলো শুরু করা যেতে পারে। একবার প্রতিষ্ঠিত হলে, এই পাইলট স্কিমগুলি একটি ক্রমবর্ধমান এবং লাভজনক স্থানীয় শিল্পের ভিত্তি তৈরি করবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ভিক্টিম না হয়ে আমরা চাই অভিযোজনে নেতৃত্ব দিতে

বাংলাদেশ ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানী নীতি প্রনয়ন করে। এই নীতি অনুযায়ি দেশের মোট ব্যবহারের ১০ শতাংশ জ্বালানী নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আহরণ করার কথা। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা তা অর্জন করতে পারিনি। যথেষ্ট সচেতনতা এবং পর্যবেক্ষণের অভাবের কারণে আমরা শুধুমাত্র ২০% – ২.৫% এ পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে আমাদের দেশে এক মিলিয়ন সেচ পাম্প আছে যেগুলো ডিজেল দ্বারা চালিত। সেগুলোতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারলে আমরা ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারব। ১৫২৩টি সৌর সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যার ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা ৪২.০৮ MWp। আমাদের লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে সৌর শক্তি ব্যবহার করে ১০ হাজার পাম্প বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। আমরা ভাসমান সৌর প্যানেল স্থাপনের করার পরিকল্পনা করছি। এর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

মুজিব জলবায়ু পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলেছে।  আমরা এটি চালু করার পর শ্রীলঙ্কা এবং ঘানা আমাদের পথ অনুসরণ করছে এবং একই ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। আসলে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের শিকারের পরিবর্তে জলবায়ু অভিযোজনে বিশ্বে নেতৃত্ব প্রদান করতে চাই।

থার্ড পোল: মুজিব জলবায়ু সমুদ্ধি পরিকল্পনা বাম্তবায়নে কোন চ্যালেঞ্জ আছে?

সাবের হোসেন চৌধুরী: আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমরা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কীভাবে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার হিসেবে গড়ে উঠতে পারি সেটি নিশ্চিত করা। বিনিয়োগকারীদের জন্য, বাংলাদেশই একমাত্র বিকল্প নয় – সমগ্র বিশ্বই বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত। যদি কোন বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়, তারা প্রথমে দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে দেখবে এবং তারপরই তারা ব্যবসা করার জন্য একটি দেশকে বেছে নেবে। ভারত বা শ্রীলঙ্কার মতো এই অঞ্চলের অনেক দেশেও বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তাদেরও নানা কার্যক্রম ও ভূমিকা রয়েছে।

আমরা বিনিয়োগকারীদের ব্যবসার সেরা পরিবেশ না দিলে তারা কখনই বাংলাদেশে আসবে না। এটা নিশ্চিত করা সহজ নয়। এটা একক কোন পরিকল্পনাও নয়। অন্য অনেক পরিকল্পনার সাথে এটির সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান এবং ডেলটা প্ল্যানের সঙ্গে সমন্বয় থাকতে হবে। ডেলটা প্ল্যানের যে প্রাথমিক ধাপগুলো আছে সেগুলোকে এখানেও বাস্তবায়ন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বয়। ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান, মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান, ডেলটা প্ল্যান এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রনীত ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি ও পাওয়ার সেক্টর মাস্টারপ্ল্যানের সাথে মুজিব জলবাযু সমৃদ্ধি প্ল্যানের সমন্বয় থাকতে হবে। এটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।  আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসার পর আরও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। আর বিশ্ব প্রেক্ষাপট তো আছেই।