icon/64x64/climate জলবায়ু

দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু মোকাবেলায় নগন্য অর্থায়ন, প্রতিশ্রুতি রাখছে না বড় দেশগুলো

নিজেদের কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ নিলেও পৃথিবীর আরেক প্রান্তে বিপদাপন্ন দরিদ্র দেশগুলোকে একই পথে চলতে অর্থায়ন কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে অধিকতর অভিযোজন প্রক্রিয়া আয়ত্ব করতে তেমন কোনো ধরনের সহায়তা করছে না উন্নত দেশগুলো

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের সাথে নিরন্তর যুদ্ধ করা দরিদ্র দেশগুলোর জন্য বছরে উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে করা ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতির ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও, তাদের প্রতিশ্রুত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অর্থ সাহায্যের পরিমান এবং জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের অন্যান্য সহায়তার পরিমান – উভয় দিক থেকেই পিছিয়ে আছে। আর এই সহায়তার মাত্রা এখনও হাতে গোনা হওয়ার কারনে দক্ষিণ এশিয়া অনুপাতহীনভাবে ক্ষতির শিকার হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর কারন পৃথিবীর এই অঞ্চলটি সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবন এলাকা এবং এখানকার অর্থনীতি প্রবলভাবে কার্বন নির্ভর জ্বালানী /বিদ্যুতের উপরে নির্ভরশীল। এ কারনে এই বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে এখানকার দেশগুলোর প্রয়োজন পর্যাপ্ত সহায়তা।

চলতি বছরের ১২ ডিসেম্বর প্যারিস চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী পালিত হতে যাচ্ছে ক্লাইমেট এম্বিশন সামিট (জলবায়ু উচ্চাশা সম্মেলন) অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। এটি একটি ভার্চুয়াল সম্মেলন (অনলাইনে অনুষ্ঠিত) যা চিলি, ইতালী এবং জাতিসংঘের সহায়তায় আয়োজন করবে বৃটেন এবং ফ্রান্স। ২০১৫ সালে দেয়া প্রশমন ও অভিযোজনে উন্নত দেশুগলো কতগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, নতুন করে কার্বন নির্গমন হ্রাসে আর কী কী প্রতিশ্রুতি দেয়া যেতে পারে এবং ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত কোপেনহেগেন জাতিসংঘ সংলাপের পর থেকে কী পরিমান অর্থ এ পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে অথবা ব্যয়ের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে তার একটি টালি তৈরির সুযোগ এবারের এই সম্মেলন।

এবারের জলবায়ু সম্মেলন এক বছর পিছিয়ে গেল কোভিড-১৯ সৃষ্ট প্রতিকূলতার করনে। অথচ এর মধ্যেই চীন, বৃটেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য কয়েকটি দেশ প্যারিস চুক্তির আলোকে নিজ নিজ দেশে কার্বন নির্গমন মাত্রা দীর্ঘমেয়াদে ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে অত্যন্ত জোর পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নিজ নিজ দেশে যাই করা হোক না কেন জলবায়ু তহবিল বা জলবায়ু অর্থায়নকে পাশ কাটিয়ে গেলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা পিছিয়ে পড়বে।

পাকিস্তানের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ কাশমালা কাকাখেল বলেন, জলবায়ু তহবিল বা অর্থায়নের ক্ষেত্রে এই বছরটি একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, আমরা তখন এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময়সীমা ২০২০ সাল নির্ধারণ করেছিলাম। এর মধ্যে দেশগুলো সরকারী ও বেসরকারী অর্থায়ন, প্রশমন ও অভিযোজন নিয়ে বহু আলোচনা করেছে। কিন্তু কেউই এনিয়ে গভীরভাবে কোনো কাজ করেনি।

কোপেনহেগেন সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন বলেছিলেন, উন্নত দেশগুলো অবিলম্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা প্রদান শুরু করবে এবং ২০২০ সালের মধ্যে বছর প্রতি এই সহায়তার পরিমান ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হবে। আসলে এটিই তখন থেকে পক্ষান্তরে জাতিসংঘের জলবায়ু চুক্তিসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ।

অর্থায়নের কথা বাড়িয়ে বলা হয়েছে

উন্নত দেশগুলো তাদের করা প্রতিশ্রুতির বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যে ধরনের অর্থায়ন করে থাকে তা পর্যবেক্ষণ করে থাকে ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট  – ওইসিডি (অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন) নামের একটি সংস্থা। তাদের তথ্য মতে,  ২০১৮ সালে উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে মোট অর্থায়নের পরিমান ছিল ৭৮.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ২০১৭ সালে কেবল ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পায় যেখানে দেশগুলো ৭১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জোগাড় করতে সম্মত হয়।

এ প্রসঙ্গে কাশমালা কাকাখেল বলেন, অর্থায়নের এই ধরণটি দেখলে মনে হতে পারে উন্নত দেশগুলো তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বেঁধে দেয়া সময়সীমার দু’বছর আগে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌছে গেছে। তবে কাকাখেলের মতে, একটু খতিয়ে দেখলে অনেকটাই শুভঙ্করের ফাঁকির মতো মনে হতে পারে। তিনি সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফ্যাম – এর একটি প্রতিবেদন থেকে উল্লেখ করে বলেন, উন্নত দেশগুলোর দাবী অনুযায়ি   ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তারা প্রায় ৫৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু পরিবর্তন মোকেবালায় অর্থায়ন করেছে। অথচ অক্সফ্যামের বিশ্লেষণ অনুযায়ি এই অর্থের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কেবল ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করা হয়েছে। বাকি অর্থ হয় ব্যয় করা হয়েছে স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকান্ড কিংবা ঋণ বাজারে।

কাকাখেল বলেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় এটাই যে অর্থায়নের প্রায় ৭০ শতাংশই প্রকৃতপক্ষে ঋণ আকারে দেয়া হয়েছে। এই অর্থ কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর এই ঋণের ৪০ শতাংশ কিন্তু কোনো প্রকারের ছাড়কৃত ঋণ নয়। অথচ এমন ক্ষেত্রে এই ধরনের ঋণের বেলায় আরো অনেক উদার শর্তবলী থাকে এবং বাজারে স্বাভাবিক অন্যান্য ঋণ সুবিধার তুলনায় এই ঋণ পূরণে আরো দীর্ঘ মেয়াদ প্রদান করা হয়ে থাকে। এর অর্থ হচ্ছে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় যেসব দেশ এখন বড় বড় দেশ বা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ গ্রহন করছে তারা আসলে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের ঘাঁড়ে আরো ঋণের বোঁঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। আর এই প্রজন্মকেই হয়ত বর্তমান প্রজন্মের চেয়ে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরো ভয়াবহ সংকটের মোকাবেলা করতে হবে।

সরকারী পর্যায় থেকে জলবায়ু অর্থায়ন ধীরে ধীরে বাড়ছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অর্থ বৈদেশীক ঋণের মাধ্যমে এনে ব্যয় করা হচ্ছে। আর এই ঋণের শর্তাবলী খুব একটা সহনশীল বা সহজ নয়। অক্সফ্যামের প্রতিবেদন অনুযায়ি এই ধরনের ঋনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ঋনের সুদ ও অন্যান্য বিষয়গুলো পুরো প্রদেয় অর্থের উপরেই নির্ধারণ করা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থ সহায়তা বা গ্রান্ট (এককালীন অর্থ সহায়তা) প্রদানের মতো না দিয়ে জলবায়ু তহবিলের অর্থ সুদ, ঋণ শোধ ও অন্যান্য বিষয়াদি বিবেচনা করেই দেয়া হচ্ছে।

জলবায়ু ন্যায়বিচার

একশন এইডের বৈশ্বিক জলবায়ু বিভাগের প্রধান হারজিৎ সিং বলেন, জলবায়ু উন্নয়ন তহবিল বা অর্থায়নে ব্যাপক উন্নয়ন না হলে তা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি বিরাট দু”শ্চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এটি একটি চরম বিপদের মুখে পতিত হওয়ার মতো একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে অদুর ভবিষ্যতে। কারণ এই উপমহাদেশটি যে কোনো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অন্যতম কেন্দ্রস্থল। যে কোনো উন্নয়নশীল দেশ যদি বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়, ঠিক যেমনটি এবছরের শুরুতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঘুর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হেনেছিল, সেই মুহুর্তে জরুরী ত্রান ও উদ্ধার তৎপরতাই দেশটির জন্য প্রধানতম কাজ হয়ে দাঁড়ায়। আর এই জরুরী মানবিক সহায়তার কাজ সম্পন্ন করার পরেই কেবল দেশটি প্রশমন ও অভিযোজনের কথা ভাবার মতো বিলাসীতা করতে পারে।

হারজিৎ সিং বলেন, দেখুন, দাতা দেশগুলো সহায়তার অর্থ প্রদান করে যদি কেবল মাত্র হিসবারক্ষনের কৌশল অবলম্বন করার মনোভাব নিয়ে বসে থাকে তাহলে এক সময় উন্নয়শীল দেশগুলোর জন্য প্রশমন কাজে ব্যয় করার মতো কোনো অর্থ থাকবে না। কারন  এসব দেশের কাছে প্রাথমিক অগ্রাধিকার হচ্ছে দুর্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদান করা। এই দেশগুলো অভিযোজনের আগে ব্যস্ত থাকে দুর্যোগ মোকাবেলায় যা জলবায়ু কূটনীতিতে বলা হয় লস অ্যান্ড ড্যামেজ। 

যেভাবে সবকিছু এগিয়ে চলছে তাতে মনে হচ্ছে ২০২০ সালের ভার্চুয়াল জলবায়ু সম্মেলনে হয়ত জলবায়ু উচ্চাশা নিয়ে আলোচনা হবে। হারজিৎ বলেন, এতে হয়ত দেশগুলো জলবায়ু মোকাবেলায় তাদের প্রশমন লক্ষ্যমাত্রার কথা তুলে ধরবে। আমার মনে হচ্ছে, এর বাইরে দেশগুলো জলবায়ু তহবিল এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে খুব একটা আলোচনায় আগ্রহী হবে না।

জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে আলোচনা শুরুর বহু আগে থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ এবং বেসরকারী সংস্থাগুলো বহু বছর ধরে এনিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে আসছিল।  ২০১৩ সালে তারা একটি দায়িত্বশীল কমিটি তৈরিতে সক্ষম হয়যে কমিটি এরইমধ্যে যেসব দেশসমূহ জলবাযু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে নানা সমস্যায় ভূগছিল তা নিরুপনের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়। যেহেতু জলবাযু পরিবর্তনের প্রভাব অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে তাই এনিয়ে বিশ্বব্যাপী সোরগোলও বেড়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জাতিসংঘের আওতায় এনিয়ে তেমন কোনো অগ্রগতিই হয়নি। লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে সর্বপ্রথম যে দেশটি আপত্তি জানিয়েছে সেটি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সরকারের আশংকা এই বিষয়ে আলোচনা দীর্ঘায়িত হলে এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের নানা দেশের জন্য মামলা-মোকাদ্দমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায়ের রাস্তা খুলে যাবে। প্যারিস চুক্তির সমঝোতার আলোচনার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে বেশ কিছু শর্ত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা বা পদ্ধতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময় বিষয়টি উল্লেখ করার সাথে সাথে এর জন্য কাউকে দায়ী করা যাবে না।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) বর্তমান সভাপতি ভূটান। দেশটির সোনাম. ডপ ওয়াংডি বলেন, এই মুহুর্তে অস্তিত্বের প্রয়োজনে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব নির্গমন মাত্রা কামিয়ে আনতে হবে এবং বিপদাপন্ন দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায়  অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনে অধিকতর অর্থায়নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।

দক্ষিণ এশিয়ার অধিকতর বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ দেশ, অন্যদিতে দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানী যেমন কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের উপরে অত্যন্ত নির্ভরশীল। ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ কার্বন নির্গমনকারী দেশ। নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষেত্রে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও কয়লা বিদ্যুতসহ অন্যান্য কার্বন নির্গমনকারী সেক্টর যেমন সিমেন্ট ও স্টিল উৎপাদনে কার্বন নির্গমনের পথ থেকে বেরিয়ে আসতে ভারতকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।

Open-cast coal mines of the Mahanadi Coal Fields Limited at Jharsuguda, Orissa [image: Alamy]

ভারতের ওডিশার ঝার্সুগুড়ায় মহানদী কয়লা ফিল্ড লি. উন্মুক্ত পদ্ধতিতে উত্তোলন। অলাভজনক সংস্থা ক্লাইমেট পলিসি ইনিশিয়েটিভ-এর (সিপিআই) ভারতের অন্তবর্তীকালীন পরিচালক ধ্রুব পুরকায়স্ত বলেন, ভারত যদি এই বিষয়টি বুঝতে ভুল করে, তাহলে সবকিছুই ভুল পথে পরিচালিত হবে। [ছবি: এলামি]

জলবায়ু অর্থায়নে বেসরকারী খাতকে উৎসাহ

দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু মোকাবেলার বিষয়ে “ভারত যদি কোনো ভুল করে থাকে তাহলে এখানকার সবকিছুই ভুল পথে পরিচালিত হবে”বলে মন্তব্য করেছেন অলাভজনক সংস্থা ক্লাইমেট পলিসি ইনিশিয়েটিভ-এর (সিপিআই) ভারতের অন্তবর্তীকালীন পরিচালক ধ্রুব পুরকায়স্ত। ভারতের জলবায়ু অর্থায়নের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে সিপিআইয়ের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যারিস চুক্তিতে সম্মত প্রতিশ্রুত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ভারতকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমান জলবায়ু অর্থায়ন অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে সব মিলিয়ে অর্থায়নের পরিমান ছিল বছর প্রতি যথাক্রমে ১৭ বিলিয়ন এবং ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

পুরকায়স্তের মতে এটি একটি বিশাল ব্যবধান। তবে ভারতের ব্যাংকগুলোতে এই মুহুর্তে বিশাল অংকের অর্থ মজুদ রয়েছে যা কিনা জলবায়ু স্পর্শকাতর পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আমি চাই আন্তর্জাতিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ভারতে আরো বেশি পরিমানে বিনিয়োগ করুক। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ত ২০০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতে নিয়ে বসে আছে অথচ তাদের এই অর্থের অত্যন্ত নগন্য একটি অংশ হয়ত জলবায়ু অর্থায়নে ব্যয় হচ্ছে। তাদের উচিত গ্রিন পেনশন ফান্ড, সার্বভৌম ফান্ড এবং দীর্ঘ মেয়াদী আর্থিক বিনিয়োগের মাধ্যমে সহায়তার পরিমান বৃদ্ধি করা। 

বেসরকারী অলাভজনক সংস্থা ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইন্সটিটিউট (ডব্লিউআরআই) এর জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ গাইয়া লারসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারত এতসব বড় বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করছে যে আমার মতে এসব চ্যাল্ঞ্জে মোকবেলায় ভারতের নিজের অর্থ ব্যয় করা সমুচিত নয়। দেশটি অবশ্যই বৈদেশিক বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে অভিযোজনের ক্ষেত্রে লাভবান হবে, যেটি আসলে কেবল অর্থায়নের অভাবে প্রশমন সক্ষমতার অনেক পিছনে পড়ে আছে। এই ক্ষেত্রে ভারতই কেবল একমাত্র দেশ নয়: ওইসিডির তথ্য মতে, ২০১৮ সালে বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের ৭০ শতাংশ ব্যয় হয় প্রশমন খাতে আর ২১ শতাংশ ছিল অভিযোজন খাতে। আর বাদবাকি বিনিয়োগ উভয় খাতেই ব্যয় হয়।

তবে লারসেন এটাও মনে করেন যে ভারত  বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ যেটি আভ্যন্তরীন বিনিয়োগের মাধ্যমে এই খাতে উন্নয়ন সাধন করতে পারে। যদিও তার মতে ভারতের জাতীয় অভিযোজন ফান্ড বিগত বেশ কয়েক বছরে পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হয়নি। তিনি বলেন, এই ফান্ড থেকে কোনো অংশ বা পুরোটাই ব্যয় করা হলেও তা হবে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের তুলনায় যৎসামান্য। তবে এটি একটি শুভ সূচনার একটি নিদর্শন হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

জলবায়ু সম্মেলন আগামী বছর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হবে। এসময় ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর (ইউএনএফসিসিসি) সকল সদস্য বিশ^ অর্থনীতিতে কার্বন নির্গমন হ্রাসে তাদের নিজ নিজ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করবে। জলবায়ু তহবিল বা অর্থায়নের বিষয়ে কোনো রকম বিচ্যুতির অর্থ হচ্ছে বিশে^র সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ও বড় দূষণ সৃষ্টিকারী কিছু দেশ হয়ত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিজেদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতার উপযোগ গ্রহনে ব্যর্থ হবে। 

অনুবাদ: আরিক গিফার

একটি মন্তব্য যোগ করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.