মহাসাগর

বঙ্গোপসাগরের সীমানা চিহ্নিত, তবুও হুমকিতে মৎস সম্পদ

বঙ্গোপসাগরে উপক‚লের দেশগুলো এরই মধ্যে নিজ নিজ সমুদ্র সীমা চিহ্নিত করে নিয়েছে, কিন্তু যথেষ্ট পারস্পরিক সহযোগিতার অভাবে এক দেশের জেলেরা প্রতিবেশী দেশের কারাগারে যেমন আটকে আছে, তেমনি চলছে অতিরিক্ত মৎস আহরণ
বাংলা
<p>Fishing in Bangladesh&#8217;s exclusive economic zone (EEZ) in the Bay of Bengal. Image source: Alamy</p>

Fishing in Bangladesh’s exclusive economic zone (EEZ) in the Bay of Bengal. Image source: Alamy

বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার বঙ্গোপসাগরে তাদের নিজ নিজ সীমানা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বিশাল এই জলরাশির মৎসসম্পদ আর এর সঙ্গে যুক্ত মৎসজীবি বা জেলেদের কি সীমানার (এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন) বেড়াজালে বেঁধে রাখা যায়? মাছেদের কোনো সীমানা নেই। আর অধিক মাছ আহরণের আশায় জেলেরা নিয়মিতই নিজ দেশের সীমানা পার হয়ে ঢুকে পড়ছে অন্যের জলসীমায়, হয়ত না জেনেই কিংবা জেনেই সীমানা লংঘনের ঘটনা ঘটছে। মাছ ধরার নৌকোর সংখ্যা মাছের পরিমানের চেয়ে বেশি হওয়ায় সাগরে জেলেদের মধ্যে সংঘাত এখন নৈমিত্তিক ঘটনা।

বাংলাদেশের কক্সবাজার ও পটুয়াখালির জেলেরা বলেন তারা সাধারণত: গভীর সাগরে অন্য দেশের মাছ ধরা জাহাজের পাশাপাশি নিজেরাও মাছ ধরার কাজ করেন। কিন্তু এখন যেহেতু সাগরে মাছের অপ্রতুলতা রয়েছে, তাই বিদেশী মাছ ধরা জাহাজগুলোর উপস্থিতি ধীরে ধীরে এক অসম প্রতিযোগীতার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে শ্রীলংকার অবৈধ মাছ ধরা জাহাজসহ জেলেদের গ্রেফতার করেছে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে। মাঝে মাঝেই এই ধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনায় জন্ম নিচ্ছে সংঘাত আর তার সমাধানও হচ্ছে। অনেক ছোট ছোট মাছ ধরার নৌকো হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা থেকে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের নজরের বাইরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানান চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন জেলে।

সংরক্ষনবাদী ও মৎস ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত অনেকেই এসব ঘটনায় আশংকা প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, প্রতিবেশী দেশগুলো সংঘাতপূর্ণ এই পরিস্থিতি বদলে সহযোগিতার প্রক্রিয়া যথাযথভাবে শুরু না করলে কেবল জেলেদের জীবনই যে কেবল ক্ষতিগ্রস্থ্য হবে তা নয়, সাগরে যেটুকু মাছ রয়েছে তাও হয়ত অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে। বঙ্গোপসাগরে তীরে আটটি দেশের প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ উপক‚লে বসবাস করে। এদের বেশিরভাগই খাদ্য ও জীবিকা হিসেবে সাগরের মৎস সম্পদের উপরে নির্ভরশীল। এদের একটি বিশাল অংশ আবার দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। অথচ এখানকার জেলেরা দীর্ঘদিন থেকে নানা ধরনের চাপের মধ্যে দিয়েই জীবন অতিবাহিত করছে। তবে পরিস্থিতি এখন আরো অসহনীয় হয়ে উঠছে দিনকে দিন। সাগরে এখন প্রচুর পরিমানে বড় বড় মাছ ধরার জাহাজ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই মৎস আহরণ করছে। এতে মৎস সম্পদের উপরে পড়ছে বিরুপ প্রভাব। স্থানীয় জেলেরা জানান প্রশাসন এসব ব্যাপারে জানলেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

নেই সহযোগিতার কোনো প্রক্রিয়া

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার অভাবে বঙ্গোপসাগরের মৎস সম্পদ ও অন্যান্য প্রানীর জন্য স্থানীয়ভাবে নেয়া বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষন কার্যক্রম মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

যদিও সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। ভারতের এক্ষেত্রে রয়েছে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক)। গেøাবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি আর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) একটি প্রক্রিয়া চালু করেছে। এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল অংশীদার এই আটটি দেশের মধ্যে স্থায়িত্বশীল মৎস ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। কিন্তু আসলে তেমন কোনো উন্নয়নই হয়নি।

সাগরে উদ্বেগ আর আটক

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরার উপরে একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এখানকার জেলেরা অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞাকে অন্যায্য মনে করেন। তারা বলেন, যে সময় বাংলাদেশে মাছ ধরার উপরে সাগরে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা হয়, ঠিক সেসময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরা চালিয়ে যান। কর্তৃপক্ষ বলছে মাছের প্রজনন ও পোনা রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা পরিচালনা করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মাহতাব খান বাঁধন বলেন, সাগরে মাছ ধরার উপরে এই ধরনের অন্যায্য আইন প্রয়োগের  ধারণার কারণে জেলেদের মধ্যে এই ধরনের ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আইন ভঙ্গের মতো এক ধরনের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। বাঁধন মনে করেন আইন প্রয়োগ একটি পূর্ণাঙ্গ সমাধান নয়। বিদেশী জেলেদের গ্রেফতার করে, তা সে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার বা অন্য যে কোনো প্রতিবেশী দেশেরই নাগরিক হোক না কেন, এর মাধ্যমে দরিদ্র এই জেলেদেরই কেবল ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়। বিগত বছরগুলোতে এই ধরনের সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় মৎস সম্পদ আহরনে বঙ্গোপসাগরে চলমান সংঘাত কমিয়ে আনা গেছে বলে কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি।

অতিরিক্ত মৎস আহরণ থামছে না

যদিও প্রচুর পরিমানে ক্ষুদ্র মৎসজীবি বা জেলে বিদেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন, কিন্তু এই ধরনের কঠোর আইন প্রয়োগ করেও কি সাগরে অতিরিক্ত মাছ আহরণ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে? চট্টগ্রামের জেলে নুর ইসলাম মাঝি বলেন, সাগরে সবার মধ্যে একটা মনোভাব থাকে। তা হচ্ছে অন্য দেশের জলসীমায় প্রবেশ করলে নিশ্চয়ই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাছ পাওয়া যাবে। গভীর সাগরে মাছ ধরা দেশীয় ছোট নৌকার এই মাঝির মাছ ধরার অভিজ্ঞতা প্রায় দুই দশকেরও বেশি। তার মাছ ধরার এই সময়কালে তিনি বহুবার বিদেশী জেলেদের মুখোমুখি হয়েছেন, বেশিরভাগ সময়ই মংলা বন্দরের দক্ষিনে গভীর সাগরে।

Many of the small scale fishing boats have minimal sophisticated equipment, and it is easy to believe that they do not know where the limits of the EEZs lie [image by: Mohammad Arju]গত বছর পটুয়াখালির অদুরে বাংলাদেশের সীমানার ১২৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ড ৫১৯ জন ভারতীয় জেলেকে গ্রেফতার করেছে। একই সাথে তারা প্রায় ৩২টি মাছ ধরার নৌকো আটক করেছে। আর এই গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকা অবস্থায়, ঠিক যখন বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরা থেকে সম্পূর্ণরুপে বিরত। ভারতীয় জেলেদের মধ্যে অনেককেই নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তবে অনেকেই আবার ফিরে যেতে পারেননি। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের তথ্য মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় জেলেকে আটক করা হয় এবং দেশে ফিরে যাওয়ার আগে তাদের অনেককেই নির্দিষ্ট পরিমানে সাজা ভোগ করতে হয়। অন্যদিকে প্রতিবেশী অন্যান্য দেশগুলোতে কী পরিমান বাংলাদেশী জেলে আটক রয়েছে তার সঠিক তথ্য জানা অত্যন্ত দূরহ। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে বাংলাদেশী কোনো জেলে আটক হলে সেখান থেকে ফিরে আসতে ভাগ্যহত এসব জেলের এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়।

আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশী জেলেদের আটকের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই আন্তর্জাতিক আইন না মানার একটি প্রবনতা দেশগুলোর কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিদ্যমান। বে অব বেঙ্গল কর্মসূচির পরিচালক ইয়োগরাজ সিং ইয়াদভ বলেন, সাগরের এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন থেকে আটককৃত কোনো জেলেকে কারাগারে প্রেরণ বা ফৌজদারী অপরাধ বিবেচনা করে শাস্তি দেয়ার বিধান নেই। সংস্থাটির সদর দফতর ভারতের চেন্নাইতে। তারা এই বিষয়ে বঙ্গোপসাগরের উপক‚লের দেশগুলোর মধ্যে এক ধরনের সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

সমুদ্রসীমা বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন-এর (আনক্লস) আর্টিকেল ৭৩ -এ বলা হয়েছে, আটককৃত মাছ ধরার জাহাজ এবং তার সব নাবিককে যত দ্রুত সম্ভব যথোপযুক্ত বন্ড বা অন্য কোনো নিরাপত্তার বিনিময়ে মুক্ত করে দিতে হবে। এই আইনটিএবং তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিগুলোর আওতায় জেলেদের সুরক্ষা ও মৎস সম্পদের সুরক্ষার বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইয়াদভ বলেন, আন্তর্জাতিক এই আইনগুলোর মাধ্যমে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাষ্ট্রগুলোকে যথেষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অথচ কোনো দেশই এই আইনগুলোর যথেষ্ট প্রতিপালন করছে না।

বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ সংগঠনের পরিচালক মোহাম্মদ লতিফুর রহমানও বিষয়টির সাথে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, কিছু বিক্ষিপ্ত সংলাপের বাইরে একটি দেশের মধ্যেও এই ধরনের কোনো কার্যকর সহযোগিতার মনোভাব দেখা যায়না। তার মতে, এই অঞ্চলের মধ্যে ভারতের রয়েছে সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র উপক‚ল। এক্ষেত্রে ভারতই এগিয়ে আসতে পারে এবং অন্যান্য দেশকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মৎস সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও যৌথ মৎস সমীক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার তা হচেছ তথ্য বিনিময় এবং একটি কার্যকর প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে এই অঞ্চলের সাগরভিত্তিক মৎস ব্যবস্থাপনায় একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলা যায়।

বিগত ২০১২ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বে অব বেঙ্গল লার্জ মেরিন ইকোসিস্টেম প্রকল্পের আওতায় একটি যৌথ গবেষণায় সাগরে যৌথ টহলসহ অন্যের জলসীমায় অবৈধভাবে প্রবেশ করলে আটককৃত জেলেদের সাথে আচরণ ও তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বেশ কিছু করনীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করা হয়।

এই প্রকল্পটি আন্তর্জাতিকভাবে একমাত্র একটি উদ্যোগ যেটি সাগরে আন্তদেশীয় মৎস ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে। প্রায় এক দশক ধরে প্রকল্পটি কাজ করে আসলেও এর খুব সামান্য পরামর্শই সরকারগুলো গ্রহন করেছে।

আসলে অদূর ভবিষ্যতে আটককৃত জেলেদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হয়ত দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তির প্রয়োজন হবে। এটি করতে হলে অবশ্যই জাহাজ মালিক, জেলেদের নিয়োগদাতা এবং সরকারের স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। এছাড়াও স্ব স্ব সরকারকে তার মৎসজীবিদেরকে এ সংকান্ত আইন-কানুন ও অন্যান্য বিধিনিষেধ সম্পর্কে অবহিত করতে তবে।

মাছের নেই কোনো সীমানা

সাগরে অনেক মাছই আছে যারা প্রজননের জন্য একটি দেশের জলসীমা অতিক্রম করে অন্য দেশের সীমায় বিচরণ করে। ইয়াদভ বলেন, কিছু মাছ আছে যেমন ইন্ডিয়ান ম্যাকারেল ও থ্রেডফিন ব্রিম পুরো সাগর জুড়েই বিচরণ করে। আরো কিছু মাছ যেমন ইলিশ, বোম্বে ডাক যেগুলো কিছু নিদিৃষ্ট এলাকাতেই বিচরণ করে। ইলিশের মতো বেশ কিছু মাছ আছে যেগুলো উপক‚লীয় জল ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে একটি দেশ থেকে অন্য দেশে আসা-যাওয়া করে থাকে। সার্ডিনের মতো অনেক মাছ বঙ্গোপসাগরের তীরের অনেক দেশের উপক‚লেই বিচরণ করে।

এমনকি চিংড়ির মতো অনেক মাছ উপক‚লীয় বেশ কিছু দেশের জলসীমায় বিচরণ করে বিশেষ করে যখন তাদের ডিম ছাড়ার সময় হয়। যেমন লবস্টার মাছ তার জন্মের স্থান থেকে প্রায় হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দেয় তার পূর্ণাঙ্গ বয়স পর্যন্ত। আসলে একটি দেশের মাছ ধরার ব্যবস্থাপনা একই বাস্তুসংস্থানে থাকা প্রতিবেশী দেশের মৎস ব্যবস্থাপনার উপরে প্রভাব সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেন ইয়াদভ।

এখনও পর্যন্ত আসলে কোন কোন মাছ একাধিক দেশের এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোনে (ইইজেড) বিচরণ করে তার কোনো গবেষণা হয়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ সার্ভে’র ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, ভারতের সাথে সর্বশেষ যৌথ বৈঠকে এনিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

হুমকিতে অনেক সামুদ্রীক প্রানী

এ মুহুর্তে অনেকেই কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। বঙ্গোপসাগরীয় ৬টি দেশ এরই মধ্যে জাতিসংঘের ১৯৯৫ ফিশ স্টক চুক্তিতে সই করেছে। এই দেশগুলোর মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে থাইল্যান্ড। তারা এরই মধ্যে ২০১৭ সালের চুক্তি অনুমোদন করেছে। মিয়ানমার ও মালয়েশিয়া অবশ্য এখনও এর সঙ্গে যুক্ত হয়নি। এই চুক্তিতে জাতিসংঘের সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত আইনের (আনক্লস) মাধ্যমে সামুদ্রিক অভিবাসী মৎস সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার কথা বলা হয়েছে।

মৎস সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে নির্দিষ্ট মাছের আহরণ হ্রাস ও ঝুঁকিপূর্ণ সামুদ্রিক প্রানীর সংরক্ষণ। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁধন বলেন, হাঙ্গড়, করাত মাছের মতো অনেক মাছ সাগরের অনেক গভীরে আসা-যাওয়া করে নিয়মিত। হাঙ্গড়ের অনেক প্রজাতি আর কচ্ছপ প্রায়শই মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে অন্যান্য বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছের সঙ্গে।

ইয়াদভ বলেন, এমন অবস্থায় একটি দেশের ভালো উদ্যোগ অন্য দেশে ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারবে না যদি না এক্ষেত্রে একটি সমন্বিত উদ্যোগ না হয়।

কিছু কিছু দেশ এই ধরনের কিছু সামুদ্রীক প্রানী সংরক্ষণ করে থাকে, কিন্তু এই সংরক্ষণ কার্যক্রমের সমন্বয় অত্যন্ত প্রয়োজন। এই অঞ্চলের সবগুলোর দেশের ঐক্যমত এবং সমন্বিত উদ্যোগ না নেয়া হলে এক্ষেত্রে কোনো উপকারই আসবে না বলে মনে করেন ইয়াদভ।

এমন আরেকটি সামুদ্রিক উদ্ভিদভোজী প্রানীর নাম ডুগং। পক বে আর গালফ অব মানারে এরা বিচরণ করে। এই অঞ্চলটিও একটি আন্ত:দেশীয় ভৌগলিক এলাকা যেটি ভারত আর শ্রিলংকার মধ্যে বিস্তুৃত। প্রতিবেশী এই দুটি দেশ এখনও এই প্রাণীটির সংরক্ষণে যৌথ কোনো কর্মকৌশল প্রনয়ন করতে পারেনি। অথচ এই প্রানীটি এখন অনেকটাই হুমকির মুখ্।ে

বঙ্গোপসাগরে মৎস ব্যবস্থাপনাকে আরো স্থায়িত্বশীল করে তুলতে যৌথ কর্মকৌশল প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো পথ নেই। যদিও এ বিষয়ে এখান কোনো একটি দেশেরও আপত্তি নেই, কিন্তু কার্যকরভাবে দেশগুলোর সরকার একযোগে সম্মত না হলে বঙ্গোপসাগরের মৎস সম্পদ আর এর সঙ্গে যুক্ত জেলেরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ্য হবে।

 

মোহাম্মদ আরজু বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় যুক্ত

 

অনুবাদ: আরিক গিফার