icon/64x64/energy শক্তি

রামপালে আমরা বিশুদ্ধ কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি: বাংলাদেশ পাওয়ার সেল মহাপরিচালক

দ্যথার্ডপোল.নেট এর সাথে আলাপকালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনের পাশে বিতর্কিত রামপাল কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প স্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক
বাংলা
<p>Mohammad Hossain, the Director General of the Power Cell, which functions under the Bangladeshi ministry of power, energy and mineral resources [image by: Kamran Reza Chowdhury] </p>

Mohammad Hossain, the Director General of the Power Cell, which functions under the Bangladeshi ministry of power, energy and mineral resources [image by: Kamran Reza Chowdhury]

ঘোষণার শুরু থেকেই ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিতব্য রামপাল কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প একটি বিতর্কিত প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের জাতীয় থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন যৌথ বিনিয়োগে এই প্রকল্পটি নির্মিত হচ্ছে। চীনের সহায়তায় আরো বেশ কয়েকটি বিদ্যুত প্রকল্প নির্মানের পরিকল্পনা থাকলেও ১,৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন রামপাল বিদ্যুত প্রকল্পটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।

বাংলাদেশের জ্বালানী, বিদ্যুত ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বিদ্যুত সেল (পাওয়ার সেল) এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন সম্প্রতি দ্যথার্ডপোলডটনেট এর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন। এক সাক্ষাতকারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের পাশে বিতর্কিত এই প্রকল্পটি স্থাপনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।

কামরান রেজা চৌধুরী (কেআরসি): রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার কতটুকু এগিয়েছে?

মোহাম্মদ হোসাইন (এমএইচ): আমরা ২০১৬ সালের মে মাসে এই প্রকল্পটির কাজ শুরুর জন্য নির্মান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করি। এই প্রকল্পের স্থাপনা নির্মানের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এর জন্য জমি অধিগ্রহন ও ব্যবস্থাপনার কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। প্রকল্পের সীমানা প্রাচীর তৈরি হয়ে গেছে। এ মুহুর্তে প্রকল্পের মূল ভবনগুলো তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি কাজ শেষ হলেই আমরা মূল প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করবো।

কেআরসি: প্রকল্পটির চালুর জন্য সব ধরনের নির্মান কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে বলে মনে করেন?

এমএইচ: সংশোধিত সময়সীমা অনুযায়ি আমরা ধারণা করছি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির প্রথম প্লান্ট (৬৬০ মেগাওয়াট) উৎপাদনে যেতে শুরু করবে। দ্বিতীয় ইউনিটটি চালুর জন্য আমাদের ৬ মাস থেকে এক বছর সময় লাগতে পারে।

কেআরসি: বাংলাদেশের সার্বিক চাহিদার বিপরীতে রামপাল প্রকল্প থেকে কী পরিমান বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে পারে বলে মনে করেন?

এমএইচ: আমাদের ভবিষ্যত চাহিদার বিপরীতে এই প্রকল্প থেকে ১,৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ১৫,৫০০ মেগাওয়াট। আসলে কৌশলগত দিক থেকে বিবেচনা করলে  রামপাল কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত দ্বারা খূলনা অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করা হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই অঞ্চলটি কিছুটা সুবিধাবঞ্চিত ও স্বল্পোন্নত একটি অঞ্চল। দেশের এই অঞ্চলের জনগণ সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলে উন্নয়ন কর্মকান্ড আরো ত্বরান্বিত হবে।

কেআরসি: রামপাল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত দ্বারা কি তবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই অঞ্চলেরই চাহিদা পূরণ করা হবে?

এমএইচ: আসলে পদ্মা ও যমুনা নদী দু’টি মুলত: আমাদের দেশের বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থাকে দু’টি অংশে বিভক্ত করেছে। দেশের পূর্বঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুত সরাবরাহ এই কারনে বেশ জটিল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুত কেন্দ্রের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য কারণ গ্যাস ফিল্ডের পরিমান খুব কম। গ্যাস ফিল্ডগুলো প্রায় সবই দেশের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। জেনে রাখা ভালো যে বাংলাদেশের প্রায় বেশিরভাগ বিদ্যুত কেন্দ্র গ্যাস চালিত।  ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৯৬ শতাংশ বিদ্যুত উৎপাদিত হতো গ্যাস-চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো থেকে। এ মুহুর্তে সার্বিক উৎপাদনের ৬২ শতাংশ বিদ্যুত আসে গ্যাস চালিত কেন্দ্রগুলো থেকে।

আরো জানতে পড়–ন (ইংরেজিতে): Will Bangladesh’s future be coal black?

কেআরসি: এ মুহুর্তে বাংলাদেশের সার্বিক বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা কত রয়েছে?

এমএইচ: আমাদের গ্রিড থেকে উৎপাদন সক্ষমতা ১৩,৫০০ মেগা ওয়াট তবে সার্বিক উৎপাদন সক্ষমতা হচ্ছে ১৫,৫০০ মেগা ওয়াট। ২,০০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন শিল্প-কারখানাগুলো দ্বারা। এই বিদু্যুত তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য উৎপাদন করা হচ্ছে। এর কিছুই জাতীয় বিতরনের সাথে যুক্ত করা হয় না।

কেআরসি: দেশে ও দেশের বাইরের পরিবেশবিদরা রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের যুত্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রথম থেকেই। তাদের মতে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা হবে সুন্দরবনের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর।  এমনকি এই প্রকল্পের কারনে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ধ্বংসও হতে পারে। তাই তাদের পক্ষ থেকে জোর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে?

এমএইচ: বাংলাদেশে এ ধরনের প্রকল্প (রামপাল) আরো একটি রয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছিল দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায়। তবে ওই প্রকল্পটির প্রযুক্তি ছিল কিছুটা প্রাচীন। এতে বলা হয় সাব-ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি। এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণের হয়ে থাকে। এরপরের পর্যায়ে রয়েছে সুপার-ক্রিটিক্যাল টেকনলজি যেটি কিছুটা উন্নত। কিন্তু এখন আমরা ব্যবহার করতে যাচ্ছি তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি। আমরা রামপাল প্রকল্পে ‘আল্ট্রা সুপার-ক্রিটিক্যাল’ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে যাচ্ছি। আসলে প্রকল্পটির সীমানা প্রাচীর থেকে সুন্দরবনের দুরত্ব ১৪ কিলোমিটার। এটি আসলে একটি নিরাপদ দুরত্ব। পৃথিবীতে রামপালের মতো এমন অনেক বিদ্যুত প্রকল্প রয়েছে যেগুলো বিশ্ব ঐতিহ্য, জাতীয় উদ্যান বা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে।

আসলে এই সুন্দরবনের সাথে এদেশের ১৬০ মিলিয়ন জনগণের আবেগ জড়িত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও আবেগের জায়গা এই সুন্দরবন। ১৯৯৭ সালে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ই সুন্দরবনকে একটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বিকৃতী দেয় ইউনেস্কো। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সম্মাননা পেয়েছেন (চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ অ্যাওয়ার্ড)। তাঁর মতো একজন প্রধানমন্ত্রী কোনো ভাবেই চাইবেন না যে সুন্দরবনের মতো একটি প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ্য হোক। এমনকি বিদ্যুত কেন্দ্রের চারপাশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হোক তা কোনো ভাবেই তিনি মেনে নেবেন না ।

পরিবেশবাদীদের উদ্বেগের বিষয়টি  মাথায় রেখে আমরা রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের নকশাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পরিকল্পনার পরিবর্তন করেছি। এরই মধ্যে আমরা সুপার ক্রিটিক্যাল থেকে আল্ট্রা ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে প্রবেশ করেছি। শুরুর দিকে এই প্রকল্পের নকশায় ক্ষতিকর সালফার ও ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করার পরিকল্পনা ছিল না। বর্তমানে আমরা এই প্রযুক্তি অন্তর্ভূক্ত করেছি আর আধুনীক এই প্রযুক্তির কারনে প্রকল্পের ব্যয় আরো ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কেআরসি: সাব- ক্রিটিক্যাল, সুপার ক্রিটিক্যাল ও আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য কী?

এমএইচ: একটি সাব- ক্রিটিক্যাল প্লান্টের সার্বিক দক্ষতা  সাধারণত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ, সুপার- ক্রিটিক্যাল প্লান্টের দক্ষতা ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির একটি প্লান্টে ৪০ শতাংশেরও বেশি দক্ষতা রয়েছে। একটি সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির প্লান্টে যে পরিমান কয়লা ব্যবহার হবে একটি সাব- ক্রিটিক্যাল প্লান্টে তার চেয়ে দ্বিগুন পরিমানে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর যত  বেশি কয়লা পুড়বে তত বেশি দূূষণ হবে।

কেআরসি: এই বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে সৃষ্ট মার্কারি দূষণ ঠেকাতে আপনাদের কী পরিকল্পনা রয়েছে?

এমএইচ: কয়লাতে থাকা মার্কারি কখনও পুড়ে না। বরং এটি ফ্লাই অ্যাশের সাথে মিশে যায়। আমরা ফ্লাই অ্যাশের ক্ষতিকর দিক এড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা ফ্লাই অ্যাশকে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে পাথরের মতো কঠিন বস্তুতে পরিণত করবো যাতে এর থেকে মার্কারি ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

কেআরসি: ইউনেস্কো শুরু থেকেই রামপাল প্রকল্প নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। এ মুহুর্তে তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে কি?

এমএইচ: এই প্রকল্প নিয়ে ইউনেস্কোর তিনটি আপত্তি ছিল। প্রথমত, তারা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তারা এই বিদ্যুত কেন্দ্রকে সুন্দরবন থেকে আরো দুরে নিয়ে স্থাপনের জন্য আহ্বান জানায়। এবং সর্বশেষ তাদের দাবী ছিল এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তারা সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ একটি বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করবে। তারা আমাদের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষার ব্যাপারেও আপত্তি জানায়। তবে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এর কোনোটিরই উল্লেখ নেই। এখন তারা কেবল ওই সমগ্র এলাকার একটি কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষার  পরামর্শ দিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে সমীক্ষায় পরিবেশের জন্য নেতিবাচক কোনো কিছু পাওয়া গেলে সে ব্যাপারে আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

কেআরসি: আপনারা কখন এই কৌশলগত সমীক্ষা সম্পাদনের কথা ভাবছেন?

এমএইচ: আমরা এরই মধ্যে এই গবেষনার কার্যপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছি। শীঘ্রই এটি প্রকাশিত হবে।

কেআরসি: কয়লা বহনের মাধ্যমে সম্ভাব্য পরিবেশ দূষণের বিষয়ে আপনারা কী ভাবছেন?

এমএইচ: ছোট ছোট যেসব লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে কয়লা পরিবহন করা হবে তা হবে আন্তর্জাতিক মানের। বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে কয়লা আনা নেয়া করা হবে আবদ্ধ কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে। এটি করা হলে সাগরের পানিতে কয়লা মেশার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। আমরা কোনো খোলা বার্জ ব্যবহার করবো না। তাই কয়লা পানিতে মেশার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

কেআরসি: কয়লা একটি অপরিশোধিত শক্তির উৎস। যখন সারা বিশ্ব এটির ব্যবহার বন্ধ করছে আমরা তখন এই দিকে যাচ্ছি। কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

এমএইচ: আমরা কয়লার দিকে কিন্তু ধাবিত হচ্ছি না। আপনি বলতে পারেন আমরা কয়লা ব্যবহারের সূচনা করেছি। উন্নত দেশগুলো বহু বছর ধরে এটি ব্যবহার করে আসছে। প্রথম দিকে তারা সাব-ক্রিটিক্যাল এবং সুপার-ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির ব্যবহারের পর এখন আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে। সারাবিশ্বে মোট উৎপাদনের প্রায় ৫৬ শতাংশ বিদ্যুত আসে কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প থেকে।

আমরা এমন একটি সময়ে কয়লা ব্যবহার করতে যাচ্ছি যখন এটিকে আর দূষণ সৃষ্টিকারী বা নোংরা বলা হচ্ছে না। আমরা আসলে ভুল কিছু করছি না। আমরা সঠিক পথেই রয়েছি। সারা পৃথিবীতেই গত ৫০-১০০ বছর ধরে কয়লা পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে।

কেআরসি: সরকারের মধ্যে কোনো কানো প্রতিষ্ঠান বা সমগ্র ব্যবস্থাপনার মধ্যে এমন কোনো কৌশল রাখা হয়েছে যার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা যাবে যে এই প্রকল্পে আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে এবং পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ্য না হয় সেজন্য সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?

এমএইচ: আমরা পরিবেশ দূষণ পর্যবেক্ষণের জন্য একটি অনলাইন ব্যবস্থা গ্রহন করতে যাচ্ছি। এর ফলে যে কেউ অনলাইন মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে নাইট্রোজেন অক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইডের পরিমান নিরুপন করতে পারবে। এছাড়া আমরা একটি জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করছি যাদের কাজ হবে এই প্রকল্পের যাবতীয় পরিবেশগত বিধিনিষেধ সার্বিকভাবে মূল্যায়ন ও নিশ্চিত করা।

কেআরসি: সুন্দরবন ছাড়া এই প্রকল্পের জন্য আর কোনো স্থান কি নির্বাচন করা যেত না?

এমএইচ: দেখুন বাংলাদেশে ভূমির যথেষ্ট স্বল্পতা রয়েছে। ইউরোপের সবগুলো দেশের জনগণকে এক করে একটি জায়গায় রাখলে ফ্রান্সের অর্ধেক জায়গা খালি থাকবে। বাংলাদেশের লোকসংখ্যার অবস্থা ভাবুন! আমাদের কৃষি, ঘরবাড়িসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রচুর জমি প্রয়োজন। এসব বিষয় বিবেচনা করে রামপালকেই আমরা বেছে নিয়েছি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদেরকে ৪০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে হবে। আর ২০৪০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের একটি দেশে পরিণত হতে আমাদের ৬০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু আমাদের সম্পদ অত্যন্ত সীমিত।আমাদের জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা এক শতাংশ বৃদ্ধি করতে হলে বিদ্যুত উৎপাদন ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে।

কেআরসি: তাহলে কি বলা যায় যে কয়লা হবে আমাদের ভবিষ্যত জ্বালানী ?

এমএইচ: মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের জনপ্রতি কার্বন নির্গমনের মাত্রা মাত্র ০.৪ মেট্রিক টন। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এটি প্রায় ১০ টনের মতো। আমরা কার্বন নি:সরণে কোনো ভূমিকা রাখিনা। আমরা দূষণ সৃষ্টিকারী কোনো দেশ নই। তার মানে এই নয় যে আমরা কার্বন নি:সরণকে সমর্থন করছি। কয়লার প্রতি নির্ভরশীলতা কমাতে আমরা এলএনজি (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানী করছি। একইসাথে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানীর প্রতিও যথেষ্ট জোর দিচ্ছি।